জলবসন্ত বা চিকেনপক্স হলো একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা ভ্যারিসেলা-জস্টার ভাইরাস দ্বারা হয়। এই রোগটি মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বড়রাও আক্রান্ত হতে পারে। বসন্তকালে জলবসন্তের প্রকোপ বাড়ে, কারণ ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল থাকে। শিশুরা জলবসন্তে আক্রান্ত হলে সঠিকভাবে যত্ন না নিলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
জলবসন্তের কারণ
জলবসন্ত ভ্যারিসেলা-জস্টার ভাইরাসের মাধ্যমে হয়। এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, বা ত্বকের ক্ষত থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমেও শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে।
জলবসন্তের লক্ষণ
জলবসন্তের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- প্রথমে হালকা জ্বর এবং ক্লান্তি
- মাথা ব্যথা এবং গলা ব্যথা
- শরীরে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোসকা, যা পরে ফেটে যায় এবং ক্ষত তৈরি হয়
- ত্বকে চুলকানি এবং ফোসকার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ে
- গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে
জলবসন্ত প্রতিরোধে করণীয়
জলবসন্ত প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন:
১. টিকা গ্রহণ
জলবসন্ত প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ভ্যারিসেলা টিকা। শিশুদের জলবসন্তের টিকা দেওয়া হলে রোগটির ঝুঁকি কমে যায় এবং আক্রান্ত হলেও তা দ্রুত নিরাময় হয়।
২. সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকুন
জলবসন্তে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শিশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন তোয়ালে, কাপড় ইত্যাদি থেকেও শিশুদের দূরে রাখুন।
৩. ঘর পরিষ্কার রাখুন
শিশুর পরিবেশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বসন্তকালে ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত।
জলবসন্তের চিকিৎসা ও ঘরোয়া যত্ন
জলবসন্তে আক্রান্ত হলে শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে এটি দ্রুত নিরাময় করা সম্ভব।
১. প্রচুর পানি ও তরল খাবার দিন
জলবসন্ত হলে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই শিশুকে প্রচুর পানি, ফলের রস এবং অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে।
২. চুলকানি কমানোর জন্য ব্যবস্থা
শিশুর ত্বকের ফোসকায় চুলকানি হলে চুলকাতে দেবেন না। চুলকালে ত্বকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ত্বকের চুলকানি কমাতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ
জ্বরের কারণে শিশুকে ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করতে পারেন, যা ত্বকের আরাম দেয়।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন
জলবসন্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করান। জ্বর বা ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কখনোই নিজে থেকে ওষুধ সেবন করবেন না।
জলবসন্ত হলে করণীয় নয়
- ফোসকাগুলো চুলকাবেন না বা খামচাবেন না।
- অপরিষ্কার পরিবেশে শিশুকে রাখবেন না।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করাবেন না।
উপসংহার
জলবসন্ত শিশুদের একটি সাধারণ রোগ হলেও সঠিক যত্ন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি দ্রুত নিরাময় হয়। তাই বসন্তকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা জরুরি। জলবসন্তে আক্রান্ত হলে ত্বকের যত্ন নিতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা দেওয়ার গুরুত্ব রয়েছে।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.