নাক দিয়ে রক্ত পড়া (Epistaxis) একটি সাধারণ সমস্যা, যা হঠাৎ করেই হতে পারে এবং অনেকের জন্য এটি বেশ উদ্বেগজনক হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যা শারীরিক বা পরিবেশগত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক কিছু নয় এবং সহজ কিছু প্রতিকার বা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এই ব্লগে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কিছু সাধারণ কারণ, প্রতিকার এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
১. নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
১.১. শুষ্ক পরিবেশ
শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় নাকের ভেতরের ঝিল্লি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। শুষ্কতা নাকের ভেতরের টিস্যুকে দুর্বল করে তোলে এবং সহজেই রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে।
১.২. আঘাত বা নাকে চাপ লাগা
নাকে আঘাত লাগলে বা নাক চুলকানো বা ঘষা দিলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ তারা প্রায়ই নাকের ভেতর আঙ্গুল দিয়ে চুলকায়।
১.৩. এলার্জি ও সংক্রমণ
নাসারন্ধ্রের সংক্রমণ বা অ্যালার্জির কারণে নাকের অভ্যন্তরে জ্বালা বা প্রদাহ হতে পারে, যা রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে। শ্বাসনালির সমস্যা থাকলে এর সঙ্গে রক্ত পড়াও হতে পারে।
১.৪. উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে, যা থেকে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।
১.৫. নাকের টিস্যুর বৃদ্ধি বা পলিপ
নাকের ভেতরে পলিপ বা টিউমারের কারণে রক্তনালির উপর চাপ পড়তে পারে, যা থেকে রক্তপাত হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
১.৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেসব ওষুধ রক্ত পাতলা করে যেমন অ্যাসপিরিন বা অ্যান্টিকোগুল্যান্ট, তা নাক দিয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া কিছু অ্যান্টি-হিস্টামিন বা ন্যাসাল স্প্রে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে নাকের টিস্যু দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
২. নাক দিয়ে রক্ত পড়লে করণীয়
যদি হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, তবে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিচে কিছু সাধারণ করণীয় উল্লেখ করা হলো:
২.১. সোজা হয়ে বসা
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে অবিলম্বে সোজা হয়ে বসুন। কখনো শুয়ে পড়বেন না বা মাথা পিছনের দিকে হেলাবেন না, এতে রক্ত গলার ভেতরে চলে যেতে পারে। সোজা বসে সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকুন যাতে রক্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।
২.২. নাকের নরম অংশ চেপে ধরা
নাকের নরম অংশ (নাসারন্ধ্র) দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরুন এবং ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। এ সময় নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, বরং মুখ দিয়ে শ্বাস নিন। এতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
২.৩. বরফ প্রয়োগ করা
একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ নিয়ে নাকের উপর হালকাভাবে চেপে ধরুন। ঠান্ডা তাপমাত্রা রক্তনালী সংকুচিত করে, যা রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করতে পারে।
২.৪. আরাম করা
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে কিছুক্ষণ আরাম করুন এবং নাকের কাছে হাত না দেওয়ার চেষ্টা করুন। নাকের মধ্যে আঙ্গুল দেওয়া বা ঘষা দিলে পুনরায় রক্তপাত হতে পারে।
৩. নাক দিয়ে রক্ত পড়া প্রতিরোধের উপায়
নাক দিয়ে রক্ত পড়া প্রতিরোধে কিছু অভ্যাস মেনে চলা উচিত। নিচে প্রতিরোধমূলক কিছু পরামর্শ উল্লেখ করা হলো:
৩.১. শুষ্কতা প্রতিরোধ
শুষ্ক পরিবেশে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া নাসারন্ধ্রে পেট্রোলিয়াম জেলি বা স্যালাইন স্প্রে ব্যবহার করলে শুষ্কতা কমে এবং রক্তপাতের ঝুঁকি কমে।
৩.২. নাকে আঘাত এড়ানো
নাকের ভেতর আঙ্গুল দেওয়া বা আঘাত লাগা থেকে বিরত থাকুন। শিশুদের এই বিষয়ে সতর্ক করা উচিত।
৩.৩. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
৩.৪. এলার্জি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ
নাসারন্ধ্রের এলার্জি বা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করুন।
৪. কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
নাক দিয়ে রক্ত পড়া সাধারণত গুরুতর কিছু নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়া ২০ মিনিট পরেও বন্ধ না হয়, ঘন ঘন রক্ত পড়ে বা রক্তের পরিমাণ বেশি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়া মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে রক্তপাত হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
নাক দিয়ে রক্ত পড়া সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো চিন্তার কারণ হতে পারে। তাই সঠিকভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জানা থাকলে সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি প্রয়োজন হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি সমস্যাটি বারবার ঘটে।