শিশুদেরও হতে পারে হৃদ্‌রোগ: লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধ

শিশুরা সাধারণত হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিতে থাকে না বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবে শিশুদেরও হৃদ্‌রোগ হতে পারে। জন্মগত ত্রুটি, সংক্রমণ, বা জিনগত কারণগুলোর ফলে শিশুরা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের হৃদ্‌রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে তা তাদের সারাজীবনের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব শিশুদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের লক্ষণ, কারণ, এবং কীভাবে এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

১. শিশুদের হৃদ্‌রোগের প্রকারভেদ

১.১. জন্মগত হৃদ্‌রোগ (Congenital Heart Disease)

শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হৃদ্‌রোগ হলো জন্মগত হৃদ্‌রোগ। এটি শিশুর জন্মের সময় থেকেই উপস্থিত থাকে এবং হৃদ্‌যন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি, যেমন হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্র বা রক্তনালীতে অস্বাভাবিকতা এর প্রধান কারণ।

raju akon youtube channel subscribtion

১.২. অ্যাকোয়ার্ড হৃদ্‌রোগ (Acquired Heart Disease)

এছাড়া কিছু শিশু জন্মের পর বিভিন্ন কারণে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ এবং কাওয়াসাকি ডিজিজের কারণে শিশুরা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

২. শিশুদের হৃদ্‌রোগের লক্ষণ

২.১. শ্বাসকষ্ট

শিশুদের হৃদ্‌রোগের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট। যদি শিশু দৌড়ানোর সময় বা একটু কাজ করলেই দ্রুত শ্বাস ফেলে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে এটি হৃদ্‌রোগের লক্ষণ হতে পারে।

২.২. খাওয়ার সমস্যা

যেসব শিশু জন্মগত হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত থাকে, তাদের খাওয়ার সময় সমস্যা হতে পারে। তারা ঠিকমতো খেতে পারে না এবং শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে।

২.৩. বুকে ব্যথা

শিশুরা যদি বুকে ব্যথার অভিযোগ করে, তবে এটি হৃদ্‌রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। এই লক্ষণ সাধারণত বড় শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

২.৪. অতিরিক্ত ক্লান্তি

হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা থাকলে শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সহজ কাজেও দুর্বলতা অনুভব করে।

২.৫. হাত-পা নীল হয়ে যাওয়া (Cyanosis)

যদি শিশুর হাত-পা বা ঠোঁট নীলচে হয়ে যায়, তবে এটি হৃদ্‌যন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যা নির্দেশ করে, যা জন্মগত হৃদ্‌রোগের লক্ষণ হতে পারে।

৩. শিশুদের হৃদ্‌রোগের কারণ

৩.১. জন্মগত ত্রুটি

শিশুদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের প্রধান কারণ হলো জন্মগত ত্রুটি। মায়ের গর্ভাবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণ, মায়ের ডায়াবেটিস, বা জেনেটিক সমস্যার কারণে শিশুর জন্মগত হৃদ্‌রোগ হতে পারে।

৩.২. সংক্রমণ

কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হৃদ্‌যন্ত্রের প্রদাহ হতে পারে, যা শিশুদের হৃদ্‌রোগ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রিউম্যাটিক জ্বর বা কাওয়াসাকি ডিজিজের কারণে হৃদ্‌যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৩.৩. জিনগত কারণ

শিশুদের হৃদ্‌রোগ জিনগত কারণেও হতে পারে। পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে যদি হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থাকে, তবে শিশুরও এই ঝুঁকি থাকতে পারে।

৪. শিশুদের হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের উপায়

৪.১. গর্ভাবস্থায় যত্ন

মায়ের গর্ভাবস্থায় সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শিশুর জন্মগত হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় মায়ের নিয়মিত চেকআপ করানো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা উচিত।

৪.২. সংক্রমণ প্রতিরোধ

শিশুদের হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সংক্রমণ থেকে শিশুদের সুরক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনমতো ভ্যাকসিন দেওয়া এবং সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

৪.৩. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

শিশুদের হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখতে তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমে অংশ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।

৪.৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

যেসব শিশুদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেশি, তাদের নিয়মিত কার্ডিওলজিস্টের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা হলে এর চিকিৎসা সহজ হয়।

৫. উপসংহার

শিশুদের হৃদ্‌রোগ একটি গুরুতর সমস্যা, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পিতামাতা ও শিক্ষকদের উচিত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। শিশুদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top