ইউরিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ যা প্রোটিনের বিপাক ক্রিয়ার সময় উৎপন্ন হয়। সাধারণত এটি কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়, তখন তা জয়েন্ট ও অন্যান্য স্থানে জমা হতে পারে। এর ফলে গাউট বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস তুলে ধরা হলো।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ:
- উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার: লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, মটরশুঁটি ইত্যাদির অতিরিক্ত সেবন।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: বিশেষ করে বিয়ারের মতো পানীয় ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।
- জল কম পান করা: পর্যাপ্ত জল না পান করলে কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমে থাকে।
- বংশগত কারণ: পরিবারের অন্য সদস্যদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে এর ঝুঁকি বাড়ে।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে করণীয়:
১. পর্যাপ্ত জল পান করুন:
যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করতে হবে।
২. উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়। এ ধরনের খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে হবে বা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খান:
ফলমূল ও শাকসবজি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে চেরি, স্ট্রবেরি, সিট্রাস ফল এবং সবুজ শাকসবজি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৪. চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খান:
অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
5. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে এটি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
৬. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন:
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড সঠিকভাবে মেটাবলাইজ হয়। তবে অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই সঠিক মাত্রায় হালকা ব্যায়াম করুন।
৭. অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলুন:
বিশেষ করে বিয়ার এবং ওয়াইন এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। অ্যালকোহল শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের বিপাক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
৮. দুধ ও দই খান:
কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধে থাকা ল্যাকটোজ ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক।
৯. গ্রিন টি পান করুন:
গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি পান করলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
১০. দৈনিক খাদ্যতালিকায় আঁশ যুক্ত খাবার রাখুন:
আঁশযুক্ত খাবার যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন, কারণ এগুলো শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে।
বাড়িতে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের কিছু প্রাকৃতিক উপায়:
- লেবুর রস: লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন ১-২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।
উপসংহার:
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, পর্যাপ্ত জল পান, শারীরিক পরিশ্রম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.