পান্তা ভাত: গবেষণায় সাধারণ এই খাবারের অসাধারণ পুষ্টিগুণ

পান্তা ভাত, যা সাধারণত বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। মূলত পূর্বের দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খাওয়া হয়। সহজপাচ্য ও প্রাকৃতিকভাবে পচানো এই খাবারটি অনেকেই হালকা ব্রেকফাস্ট হিসেবে গ্রহণ করেন, বিশেষত পহেলা বৈশাখে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তবে আধুনিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, পান্তা ভাত শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ।

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ:

১. প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ:

পান্তা ভাতে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায়, যা খাবার হজমে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. পাচনতন্ত্রের জন্য ভালো:

পান্তা ভাত সহজপাচ্য হওয়ার কারণে এটি খাবার হজমে সহায়ক। অনেক সময় ভারী খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, কিন্তু পান্তা ভাত খেলে অন্ত্রের সমস্যার আশঙ্কা কমে যায়।

৩. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:

গরমের দিনে পান্তা ভাত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। এতে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকালে এই খাবার দেহকে ঠান্ডা রাখতে বিশেষ কার্যকর।

৪. উচ্চ শক্তির উৎস:

যেহেতু পান্তা ভাত ভাতে তৈরি, তাই এটি শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। ধীরে ধীরে হজম হওয়ার কারণে এটি দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি প্রদান করে। কৃষিকাজ বা শারীরিক পরিশ্রমের পর অনেকেই এই খাবার খেয়ে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করেন।

৫. পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি:

পান্তা ভাতকে প্রাকৃতিকভাবে পচানো খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফলে ভাতে উপস্থিত ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষত, ভিটামিন বি১২ পান্তা ভাতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, যা স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তের জন্য উপকারী।

৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:

গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি রয়েছে, যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিক্যালস দূর করতে সাহায্য করে। এটি দেহের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৭. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে:

প্রোবায়োটিক উপাদানের কারণে পান্তা ভাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

৮. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য পান্তা ভাত একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এটি সহজপাচ্য এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ার কারণে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

পান্তা ভাত খাওয়ার উপায়:

১. নিম, সরিষার তেল, আর শুকনা মরিচ:

পান্তা ভাত সাধারণত সরিষার তেল, শুকনা মরিচ, এবং লবণ দিয়ে খাওয়া হয়। এতে স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতাও বৃদ্ধি পায়।

২. আলু ভর্তা বা অন্যান্য ভর্তা:

পান্তা ভাতের সাথে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা যেমন, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা খাওয়া যেতে পারে। এগুলি খাবারকে আরও পুষ্টিকর ও স্বাদে সমৃদ্ধ করে।

৩. পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ:

অনেকেই পান্তা ভাতের সাথে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এবং লবণ মিশিয়ে খেতে ভালোবাসেন। এতে ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার:

পান্তা ভাত শুধু একটি প্রাচীন খাবার নয়, এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং হজমশক্তি বাড়ানোর মতো অসাধারণ গুণাবলির কারণে পান্তা ভাত আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়া অন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top