শীতে হাঁপানি রোগীর প্রস্তুতি: সুস্থ থাকতে যে বিষয়গুলো মেনে চলবেন

শীতের মৌসুম হাঁপানি রোগীদের জন্য একটি কঠিন সময় হতে পারে। শীতকালে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই হাঁপানি রোগীদের শীতকালে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে শীতে এই সমস্যাগুলোর থেকে সহজেই মুক্ত থাকা সম্ভব।

শীতে হাঁপানি রোগীর করণীয়:

১. বাইরের ঠান্ডা এড়িয়ে চলুন:

শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই গরম পোশাক পরুন এবং মুখ ঢেকে রাখুন, যেন ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ না করতে পারে। বিশেষ করে ভোরবেলা বা রাতের ঠান্ডায় বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

raju akon youtube channel subscribtion

২. গরম পোশাক পরুন:

শীতে শরীর গরম রাখতে উপযুক্ত পোশাক পরা অত্যন্ত জরুরি। গরম কাপড়, স্নাগল, শাল, মোজা এবং গ্লাভস পরুন, যাতে শরীর ঠান্ডা না হয়। ঠান্ডা শরীর হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা বাড়াতে পারে।

৩. শুষ্ক ও ধুলোমুক্ত পরিবেশে থাকুন:

শীতে আবহাওয়া শুষ্ক এবং ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হাঁপানির সমস্যা বাড়ায়। তাই ঘর ধুলোমুক্ত এবং আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন, যা ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা কমায়।

৪. ইনহেলার সবসময় সঙ্গে রাখুন:

হাঁপানি রোগীদের জন্য ইনহেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়ার আশঙ্কা থাকে, তাই সবসময় ইনহেলার সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করুন।

৫. ঘর গরম রাখুন:

শীতকালে ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই ঘর গরম রাখার জন্য রুম হিটার ব্যবহার করুন, তবে খেয়াল রাখুন ঘরের বাতাস যেন বেশি শুষ্ক না হয়ে যায়। হিটারের সাথে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে ঘরের আর্দ্রতা বজায় থাকে।

৬. অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকুন:

শীতে ধুলাবালি, পোষা প্রাণীর লোম, ফুলের পরাগ এবং ধোঁয়া হাঁপানির প্রধান অ্যালার্জেন হতে পারে। এ সময় এই ধরনের অ্যালার্জেন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

৭. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

শীতকালে শরীরের পানি শূন্যতা বেশি হতে পারে, যা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বাড়ায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং শ্বাসতন্ত্র সুস্থ থাকে।

৮. ব্যায়াম করুন:

নিয়মিত ব্যায়াম শ্বাসযন্ত্রকে সবল রাখে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে শীতে ব্যায়াম করার সময় ঘরের ভেতরেই হালকা ব্যায়াম করুন এবং বাইরে ধূলাবালি থেকে দূরে থাকুন।

৯. তাপমাত্রার পরিবর্তন এড়িয়ে চলুন:

শীতকালে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। তাই বাইরে যাওয়ার আগে কয়েক মিনিটের জন্য ঘরের দরজা বা জানালা খুলে রাখুন, যাতে শরীর তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

১০. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন:

শীতকালে হাঁপানি রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফল, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন, যা শরীরকে সুস্থ রাখবে এবং শ্বাসকষ্ট কমাবে।

হাঁপানি রোগীদের খাদ্যাভ্যাস:

শীতকালে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত, যেমন:

  • ফল ও শাকসবজি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • মধু ও আদা: মধু এবং আদা শ্বাসতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এগুলো শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
  • হালকা গরম পানি: শীতকালে হালকা গরম পানি পান করা শ্বাসতন্ত্রকে আরাম দেয় এবং শুষ্কতা কমায়।
  • মাছের তেল: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছের তেল হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

উপসংহার:

শীতে হাঁপানি রোগীদের জন্য সঠিক প্রস্তুতি এবং যত্ন অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার, গরম পোশাক পরা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত পানি পান হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাই শীতের আগে থেকেই সচেতন থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলুন।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top