কোমর ও পিঠের ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা যা অনেক মানুষই ভুগে থাকেন, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন বা ভারী কাজ করেন। এই ব্যথা কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত কিছু করণীয় মেনে চললে কোমর ও পিঠব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কোমর ও পিঠব্যথার সাধারণ কারণ:
১. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা:
অফিস বা বাড়িতে অনেক সময় ধরে বসে থাকার কারণে কোমরে চাপ পড়ে, যা কোমর ও পিঠব্যথার কারণ হতে পারে।
২. ভুল অঙ্গবিন্যাস:
ভুল অঙ্গবিন্যাসে বসা বা দাঁড়ানো পিঠ ও কোমরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথার জন্ম দেয়।
৩. ভারী বস্তু তোলা:
ভারী বস্তু ভুলভাবে তুললে বা শরীরের অস্থি ও পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে কোমর ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
৪. শারীরিক অনুশীলনের অভাব:
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন না করলে পিঠের পেশি দুর্বল হয়ে যায়, যা ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ওজন:
অতিরিক্ত ওজন শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কোমরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
কোমর ও পিঠব্যথা প্রতিরোধের উপায়:
১. সঠিক অঙ্গবিন্যাস বজায় রাখুন:
সঠিক অঙ্গবিন্যাসে বসা ও দাঁড়ানো ব্যথা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বসার সময় পিঠ সোজা রাখুন এবং কাঁধকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন। দাঁড়ানোর সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য দুই পায়ে সমানভাবে ভর দিন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
পিঠের পেশি মজবুত রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। কোমর ও পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে কিছু বিশেষ ধরনের স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর।
- ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ: পিঠের পেশি ও মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখে।
- কোবরা পোজ: কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ব্রিজ পোজ: পিঠের পেশিগুলোকে সবল রাখে।
৩. ভারী বস্তু তুলতে সাবধানতা:
ভারী বস্তু তুলতে হলে পায়ের পেশি ব্যবহার করুন, কোমর বা পিঠ নয়। বসে ভারী বস্তু তুলুন এবং পিঠ সোজা রাখুন।
৪. বিরতি নিন ও সচল থাকুন:
দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে প্রতিদিন কয়েকবার বিরতি নিন এবং হাঁটাচলা করুন। প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর কিছুক্ষণের জন্য উঠুন, একটু হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
৫. সঠিক ম্যাট্রেস ও বালিশ ব্যবহার করুন:
পিঠ ও কোমরের ব্যথা প্রতিরোধে সঠিক ম্যাট্রেস ও বালিশ ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব নরম বা খুব শক্ত ম্যাট্রেসে শোয়া পিঠের পেশির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোমর ও পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে মাঝারি নরম ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
অতিরিক্ত ওজন পিঠ ও কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. উপযুক্ত জুতো ব্যবহার করুন:
উঁচু হিলের জুতো কোমর ও পিঠের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমন জুতো ব্যবহার করুন, যা আরামদায়ক এবং পায়ের আঙ্গুল ও গোড়ালিতে সঠিকভাবে বসে।
৮. পিঠে ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রাম নিন:
পিঠে ব্যথা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম নিন এবং গরম সেঁক দিন। ব্যথা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কোমর ও পিঠের ব্যথা প্রতিরোধ:
নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ পেশিকে সবল রাখে এবং ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে হাড় শক্তিশালী হয়।
খাবার যা খেতে পারেন:
- দুধ, দই, এবং চিজ: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
- ডিম ও সামুদ্রিক মাছ: ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ।
- ফল ও শাকসবজি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেল সমৃদ্ধ, যা পেশির ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
উপসংহার:
কোমর ও পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে সঠিক অঙ্গবিন্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক অনুশীলন, সঠিক বসার অভ্যাস, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোমর ও পিঠব্যথা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.