ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু রোগ হলে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সঠিক সেবাযত্নের মাধ্যমে রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। বাড়িতে ডেঙ্গু রোগীর সেবাযত্ন নেওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলা দরকার, যাতে রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং জটিলতা এড়ানো যায়।
ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ:
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে:
- উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পিছনে ব্যথা
- পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
- বমি বমি ভাব এবং বমি করা
- গায়ে লালচে র্যাশ উঠা
- রক্তচাপ কমে যাওয়া
বাড়িতে ডেঙ্গু রোগীর সেবাযত্নের করণীয়:
ডেঙ্গু রোগীর বাড়িতে চিকিৎসার সময় কিছু বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। নিচে সেসব বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন:
ডেঙ্গু রোগীর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর শরীর দুর্বল থাকে, তাই তাকে বেশি শারীরিক পরিশ্রম না করিয়ে যথেষ্ট আরামদায়ক অবস্থায় বিশ্রামে থাকতে দিন। রোগীর ঘুম ও বিশ্রামের সময় যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
২. পানিশূন্যতা রোধ করুন:
ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে, তাই রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দিতে হবে। স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, ফলের রস এবং স্যুপ ইত্যাদি তরল খাবার রোগীর শরীরে পানি ও লবণের অভাব পূরণে সাহায্য করে। রোগীকে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ লিটার তরল পানীয় দিতে হবে।
৩. পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান:
রোগীর জন্য সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া জরুরি। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই পুষ্টিকর খাবার রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সহায়ক হতে পারে। যেমন:
- ডালিম: প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
- পেঁপে পাতা: এটি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য উপকারী বলে ধারণা করা হয়।
- ভাত, খিচুড়ি, সবজি: সহজে হজম হয় এবং শরীরের শক্তি প্রদান করে।
৪. জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
ডেঙ্গুতে রোগীর জ্বর বেশি থাকতে পারে। জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীকে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপুন। ডাক্তার যদি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, তা দিন। তবে ডেঙ্গু রোগীর জন্য অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. মশা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করুন:
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চারপাশে মশা যেন রোগীকে কামড়াতে না পারে, সেজন্য রোগীর ঘর মশারি দিয়ে ঢেকে রাখুন। মশার বিস্তার রোধে ঘরের আশেপাশে জমে থাকা পানি ফেলে দিন এবং ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
৬. পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করুন:
রোগীর ঘরে যথেষ্ট বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে রোগী বিশ্রাম নেওয়ার সময় আরামদায়ক অনুভব করে। ঘর পরিষ্কার ও ঠাণ্ডা রাখার জন্য ফ্যান বা এসি ব্যবহার করতে পারেন।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
ডেঙ্গু একটি জটিল রোগ, তাই বাড়িতে সেবাযত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি রোগীর প্লাটিলেটের সংখ্যা অত্যন্ত কমে যায়, অতিরিক্ত রক্তপাত হয় বা রক্তচাপ কমে যায়, তাহলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
৮. রোগীকে মানসিক সাপোর্ট দিন:
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য মানসিক সাপোর্ট দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখুন এবং সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিন।
৯. রক্তের প্লাটিলেট পর্যবেক্ষণ:
ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। প্লাটিলেটের সংখ্যা খুব বেশি কমে গেলে এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রূপ নিতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়:
- ঘরের আশেপাশে কোনো জায়গায় পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিন।
- মশা তাড়ানোর জন্য মশারি ব্যবহার করুন এবং মশার স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করুন।
- ফুলহাতা জামা এবং লম্বা প্যান্ট পরার চেষ্টা করুন।
উপসংহার:
ডেঙ্গু রোগীর সেবাযত্নে বাড়িতে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং পানীয় সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং রোগীর প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। সঠিক সেবাযত্নের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীকে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.