ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিস থেকে সুরক্ষার উপায়

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, যা মিউকোরমাইকোসিস নামে পরিচিত, একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক ছত্রাক সংক্রমণ। কোভিড-১৯ মহামারির পর এই সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী বেশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, বিশেষত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য। মিউকোরমাইকোসিস মূলত মিউকোরমাইসিট নামক এক ধরনের ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে, যা মাটি, গাছপালা, পচা জৈব পদার্থ, এবং পরিবেশের অন্যান্য স্থানে সহজেই পাওয়া যায়।

মিউকোরমাইকোসিসের কারণ:

  • কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর: কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড ওষুধগুলোর কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা এই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণের একটি বড় কারণ। ডায়াবেটিসের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে: স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ: ক্যান্সার বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারীরা, যারা প্রতিরোধী ওষুধ নিচ্ছেন, তারাও এই সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন।

raju akon youtube channel subscribtion

মিউকোরমাইকোসিসের লক্ষণসমূহ:

মিউকোরমাইকোসিসের লক্ষণগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাক থেকে কালো রঙের স্রাব বের হওয়া
  • মুখ বা নাকের চারপাশের ত্বকে কালচে দাগ দেখা দেয়া
  • চোখ ফুলে যাওয়া, লালচে হওয়া বা দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • দাঁত বা চোয়ালের ব্যথা বা শিথিলতা
  • শ্বাসকষ্ট বা কাশির সাথে রক্তক্ষরণ

মিউকোরমাইকোসিস থেকে সুরক্ষার উপায়:

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর।

২. স্টেরয়েড ব্যবহারে সতর্কতা:

কোভিড-১৯ বা অন্য কোনো অসুস্থতার সময় স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজে স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করবেন না।

৩. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি এড়াতে ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। নিয়মিত হাত ধোয়া, মুখের যত্ন নেওয়া এবং পরিবেশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. পরিবেশ থেকে দূরে থাকা:

যে পরিবেশে ছত্রাক বেশি থাকতে পারে, যেমন- ধুলাবালি, ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে স্থান, পচনশীল পদার্থ, এবং নির্মাণস্থল থেকে দূরে থাকা উচিত। কাজের প্রয়োজনে এমন স্থানে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

৫. অক্সিজেন থেরাপি নেওয়ার সময় সতর্কতা:

যাদের অক্সিজেন থেরাপি দরকার, তাদের খেয়াল রাখতে হবে যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিউমিডিফায়ার পরিষ্কার আছে কিনা। অপরিষ্কার হিউমিডিফায়ার থেকেও ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

৬. যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:

যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন- নাক, মুখ, চোখ বা ত্বকে কালচে দাগ, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা হলে মিউকোরমাইকোসিস থেকে বাঁচা সম্ভব।

মিউকোরমাইকোসিসের চিকিৎসা:

মিউকোরমাইকোসিসের চিকিৎসার জন্য সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহৃত হয়, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা শুরুর সময় যত দ্রুত হবে, রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি।

উপসংহার:

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিস কোভিড-১৯ পরবর্তী একটি জটিল সংক্রমণ যা অবহেলা করা যাবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্টেরয়েডের সঠিক ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হলে এই মারাত্মক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top