পাইলস প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়: স্বাস্থ্যের যত্নে সচেতন থাকুন

পাইলস বা হেমোরয়েডস হলো মলদ্বারের শিরা ফুলে যাওয়া এবং প্রদাহ হওয়ার সমস্যা। এটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে রক্তপাতও হতে পারে। পাইলসের সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ, অতিরিক্ত সময় বসে থাকা, এবং নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস। তবে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে পাইলস প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করা সম্ভব।

পাইলস প্রতিরোধের উপায়:

১. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান

ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক এবং মল নরম করে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে মল ত্যাগের সময় চাপ কম পড়ে, ফলে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: শাকসবজি, ফল, ডাল, মটরশুঁটি, শস্যজাতীয় খাবার

raju akon youtube channel subscribtion

২. প্রচুর পানি পান করুন

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে মল নরম থাকে এবং হজমশক্তি উন্নত হয়। ফলে মলদ্বারে চাপ কম পড়ে, যা পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক।

৩. প্রচলিত হজমশক্তির নিয়মিততা বজায় রাখুন

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেট ব্যবহারের অভ্যাস করলে হজমশক্তি ভালো থাকে এবং পাইলসের ঝুঁকি কমে যায়।

৪. অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন

অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকলে মলদ্বারের শিরাগুলোতে চাপ পড়ে, যা পাইলসের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে এই ঝুঁকি বেশি হয়।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম করলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়। এটি মলদ্বারের চাপ কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অতিরিক্ত ওজন হলে মলদ্বারের শিরাগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

পাইলসের প্রতিকার:

১. ওষুধ প্রয়োগ

প্রাথমিক পর্যায়ের পাইলস হলে মলম বা ক্রিম ব্যবহার করলে উপশম পাওয়া যায়। এছাড়া, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ ব্যবহারে প্রদাহ ও ব্যথা কমে।

২. গরম পানির সিটজ বাথ

গরম পানির সিটজ বাথ পাইলসের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং আরাম পাওয়া যায়।

৩. ঠান্ডা প্যাক ব্যবহার করুন

ঠান্ডা প্যাক বা বরফের প্যাক পাইলসের ফোলা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি মলদ্বারে আরাম দেয়।

৪. মল নরম করার ওষুধ

যেসব ক্ষেত্রে পাইলসের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মল নরম করার ওষুধ (ল্যাক্সেটিভ) ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন

গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই উপসর্গ বাড়লে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পাইলস থেকে মুক্তির ঘরোয়া টিপস:

  • তুলসী পাতার রস: তুলসী পাতার রস পাইলসের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। তুলসীর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ রয়েছে।
  • মধু ও লেবু: গরম পানিতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং পাইলসের ঝুঁকি কমে যায়।
  • দই খাওয়া: প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ টক দই হজম শক্তি বাড়ায় এবং পাইলসের উপশমে সাহায্য করে।

পাইলসের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • হজম ভালো রাখতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রচুর পানি পান করুন।
  • অতিরিক্ত ঝাল, তেল ও মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • দীর্ঘ সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকবেন না।
  • মল ত্যাগের সময় খুব বেশি চাপ দেবেন না।
  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং ব্যায়াম করুন।

উপসংহার:

পাইলস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক। পাইলস হলে প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়া উপায়ে বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা যেতে পারে।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top