ফ্যাটি লিভারের কারণ ও প্রতিকার: লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করার উপায়

ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা হওয়া বর্তমানে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের টক্সিন দূর করে। তবে বিভিন্ন কারণে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে, যা লিভারের কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নিই ফ্যাটি লিভারের কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

ফ্যাটি লিভারের কারণসমূহ

ফ্যাটি লিভার মূলত দুটি প্রকারে ভাগ করা যায়:

  1. অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD): অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে লিভারে চর্বি জমা হয়।
  2. নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD): মদ্যপান না করেও বিভিন্ন কারণে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

ফ্যাটি লিভারের সাধারণ কারণগুলো হলো:

  1. অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা: শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট লিভারে জমা হয়, যা ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ।
  2. ডায়াবেটিস: টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  3. উচ্চ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড: রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে।
  4. অতিরিক্ত মদ্যপান: দীর্ঘমেয়াদী মদ্যপান লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চর্বি জমাতে সহায়ক।
  5. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত ফাস্টফুড, প্রসেসড ফুড, চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার লিভারে চর্বি জমাতে পারে।
  6. দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবন: কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি লিভারে চর্বি জমাতে পারে।
  7. বংশগত কারণ: পরিবারের মধ্যে লিভারের সমস্যা থাকলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণসমূহ

ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • ডান পাঁজরের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • ক্ষুধামন্দা
  • ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়া (জন্ডিস)
  • পেট ফুলে যাওয়া (অ্যাসাইটিস)

ফ্যাটি লিভারের প্রতিকার ও করণীয়

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। নিচে কিছু করণীয় দেওয়া হলো:

1. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানো জরুরি।
  • ধীরে ধীরে ওজন কমাতে হবে; দ্রুত ওজন কমালে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা

  • কম চর্বিযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, পুরো শস্য, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • অতিরিক্ত চিনি, ফাস্টফুড, প্রসেসড ফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

3. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম বা হাঁটা করতে হবে।
  • শারীরিক কার্যকলাপ মেটাবলিজম বাড়ায় এবং লিভারের চর্বি কমাতে সহায়ক।

4. মদ্যপান পরিহার করা

  • মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
  • অ্যালকোহল লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

5. ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।

6. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

  • ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি ও রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ ও নিয়মিত ফলো-আপ করুন।

7. ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা

  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
  • লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন ওষুধ এড়িয়ে চলুন।

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ইত্যাদি খান।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

উপসংহার

ফ্যাটি লিভার একটি নিরব ঘাতক হলেও, সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে এটি প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন এবং লিভারের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top