স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং সংক্রামক ত্বকের রোগ, যা মূলত সারকোপটিস স্ক্যাবিয়ি নামে একটি মাইট বা ক্ষুদ্র পরজীবীর কারণে হয়। এটি ত্বকে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলে ত্বকে প্রচণ্ড চুলকানি এবং লালচে ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয়। সঠিক প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
স্ক্যাবিস রোগের লক্ষণ
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- প্রচণ্ড চুলকানি: স্ক্যাবিস হলে রাতের বেলায় চুলকানি বেশি হয়।
- লাল ফুসকুড়ি ও গুটিকা: ত্বকে লাল ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট গুটি দেখা যায়, যা খুবই চুলকায়।
- ত্বকের চামড়া উঠে যাওয়া: চুলকানোর কারণে ত্বকের উপরিভাগের চামড়া উঠে যেতে পারে।
- ফোস্কা ও ক্ষত: ত্বকের উপরিভাগে ফোস্কা বা ক্ষত তৈরি হয়।
- ফিঙ্গার বা আঙুলের মাঝে চুলকানি: আঙুলের মাঝে এবং শরীরের ভাঁজে চুলকানি বেশি হয়।
স্ক্যাবিস সংক্রমণের কারণ
স্ক্যাবিস মূলত একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া:
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে ব্যবহার করলেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা ঘনিষ্ঠ পরিবেশে একাধিক মানুষের মাঝে স্ক্যাবিস ছড়াতে পারে।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়
স্ক্যাবিস প্রতিরোধ করতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: প্রতিদিন গোসল করা এবং পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা জরুরি।
- পোশাক ও বিছানাপত্র পরিষ্কার রাখা: পোশাক, বিছানাপত্র, তোয়ালে নিয়মিত পরিষ্কার ও গরম পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো: আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত।
- ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি না করা: নিজের ব্যবহৃত পোশাক, তোয়ালে বা বিছানাপত্র অন্যের সাথে ভাগাভাগি করবেন না।
- বাসার সবাইকে সতর্ক রাখা: ঘরের কেউ আক্রান্ত হলে পরিবারের সবাইকে সতর্ক হতে হবে, কারণ এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা করতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু সাধারণ চিকিৎসা ও করণীয় তুলে ধরা হলো:
- মলম বা ক্রিম ব্যবহার: স্ক্যাবিস চিকিৎসার জন্য মাইট নিধনকারী (স্ক্যাবিসাইড) মলম বা ক্রিম ব্যবহার করতে হয়, যেমন পারমেথ্রিন ক্রিম। আক্রান্ত স্থানে এটি প্রয়োগ করতে হবে।
- ওষুধ সেবন: কখনও কখনও ডাক্তার মুখে খাওয়ার ওষুধ (যেমন আইভারমেকটিন) প্রয়োগ করতে পারেন।
- চুলকানি কমানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন: চুলকানি কমানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নখ কেটে রাখা: চুলকানি বেশি হলে নখ ছোট করে রাখতে হবে, যাতে ত্বকের ক্ষত না হয়।
- চিকিৎসা চলাকালীন পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া: স্ক্যাবিস একজন থেকে অন্যজনের মাঝে ছড়াতে পারে, তাই বাড়ির অন্যান্য সদস্যকেও চিকিৎসা করা উচিত।
উপসংহার
স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগ ত্বকের একটি বিরক্তিকর সমস্যা হলেও, সঠিক প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া স্ক্যাবিস নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলা এবং পরিবারের সবাইকে সচেতন রাখা অপরিহার্য।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.