রোজা রাখার সময় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা হয়, তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে সেহরি ও ইফতারে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার বেছে নিলে সারা দিন রোজা রাখার শক্তি পাওয়া যায় এবং শরীর ক্লান্তি অনুভব করে না। আসুন জেনে নিই, রোজাদারের জন্য কোন খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর এবং কীভাবে এগুলো সেহরি ও ইফতারে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
সেহরিতে কী খাবেন:
১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
- সেহরিতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে সারাদিন পেট ভরা থাকে। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ, দই এবং ছোলা প্রোটিনের চমৎকার উৎস।
- ডাল বা শিমজাতীয় খাবারও প্রোটিনের ভালো উৎস এবং সেহরির জন্য স্বাস্থ্যকর।
২. কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট যেমন লাল চালের ভাত, গমের রুটি, ওটস ইত্যাদি সেহরিতে খেলে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি প্রদান করে। এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং সারাদিন পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
- চিড়া ও মুড়ি দুধ দিয়ে খেলে শক্তি পাওয়া যায় এবং হজমও সহজ হয়।
৩. শাকসবজি ও ফলমূল
- সেহরিতে শাকসবজি খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া যায়। শাকসবজি যেমন- পালং শাক, টমেটো, শসা ইত্যাদি খাবারের সাথে রাখতে পারেন।
- ফলমূল, বিশেষ করে কমলালেবু, আপেল, কলা খেলে শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ হয়, যা সারা দিন শক্তি জোগায়।
৪. পর্যাপ্ত পানি
- সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যাতে সারাদিন শরীর ডিহাইড্রেট না হয়। লাবাং, ডাবের পানি বা হারবাল চা পান করাও ভালো।
ইফতারে কী খাবেন:
১. খেজুর
- রোজার ইফতার খেজুর দিয়ে শুরু করা সুন্নত এবং এটি শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায়। খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, এবং বিভিন্ন মিনারেল যা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে।
২. তাজা ফল ও সালাদ
- ইফতারে তাজা ফল যেমন তরমুজ, পেঁপে, আঙুর, কমলা খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পানি সরবরাহ হয়। এছাড়া সালাদও রাখতে পারেন, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং হজমে সহায়ক।
৩. স্যুপ বা তরলজাতীয় খাবার
- ইফতারে স্যুপ খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। মুরগির স্যুপ, শাকসবজি স্যুপ বা ডালের স্যুপ ইফতারের জন্য আদর্শ।
৪. প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
- ইফতারে ছোলা, শিমের দানা, মুরগির মাংস, দই ইত্যাদি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে পেট ভরা থাকে এবং শক্তি ফিরে আসে।
৫. পূর্ণ শস্য এবং রুটি
- ইফতারে লাল চালের খিচুড়ি, গমের রুটি বা ওটস খাওয়া ভালো। এগুলো হজম হতে সময় নেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে শক্তিশালী রাখে।
রোজাদারদের এড়িয়ে চলা উচিত যেসব খাবার:
১. ভাজা-পোড়া এবং অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার
- ইফতারে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার যেমন সমুচা, পিয়াজু, চপ ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং শরীরে চর্বি জমাতে পারে।
২. অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার
- জিলাপি, মিষ্টি, কেক ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীরের শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৩. কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং সফট ড্রিঙ্কস
- কোল্ড ড্রিঙ্কস বা সফট ড্রিঙ্কস রোজায় শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি শরীর ডিহাইড্রেট করে এবং হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৪. ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয়
- চা, কফি, এবং ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় বেশি পান করা উচিত নয়। ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে।
উপসংহার
রোজাদারের জন্য সঠিক খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি ও ইফতারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং পর্যাপ্ত পানির মিশ্রণ রাখলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং রোজা রাখা সহজ হবে। পাশাপাশি ভাজা-পোড়া, মিষ্টি এবং সফট ড্রিঙ্কসের মতো অপুষ্টিকর খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রোজা পালনের সময় আপনি শরীরকে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখতে পারবেন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.