গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়। ইসলাম ধর্মে রোজা রাখা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য ফরজ, তবে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে শরীরের বিশেষ অবস্থার কারণে এটি নিয়ে কিছু শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। রোজা রাখার সময় গর্ভের সন্তানের সুস্থতা এবং মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখানে গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখা বা না রাখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গর্ভবতী মায়ের জন্য ইসলামের দৃষ্টিকোণ
ইসলামে মা এবং সন্তানের জীবন ও সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি রোজা রাখা মায়ের বা শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাহলে রোজা না রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ কিংবা সফরে থাকবে, তাদের জন্য অন্য দিনসমূহে রোজা পূর্ণ করা অনুমোদন করা হয়েছে।”
– (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
গর্ভবতী মায়েরা এই শর্তের আওতায় পড়েন যদি তাদের রোজা রাখার ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে, রোজা রাখতে না পারলে ফিদইয়া বা কাফফারা দিয়ে রোজার বদলি করতে হবে। তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা রাখার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে তাদের শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে।
গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখার স্বাস্থ্যগত প্রভাব
১. গর্ভবতীর শারীরিক শক্তি ও পুষ্টি চাহিদা
গর্ভবতী অবস্থায় নারীর শরীরে পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়, বিশেষত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে। এই সময় মায়ের শরীরে বেশি পুষ্টি প্রয়োজন যাতে সন্তানের সঠিক বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ সময় খাবার বা পানীয় গ্রহণ না করার ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক হতে পারে।
২. রক্তচাপের পরিবর্তন
রোজার সময় দীর্ঘ সময় না খাওয়া এবং পান না করার কারণে রক্তচাপ হ্রাস বা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা যারা আগে থেকেই উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া)
গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে তা মায়ের শারীরিক দুর্বলতা এবং সন্তানের বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় না খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য
গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখার ফলে গর্ভের সন্তানের ওজন কম হতে পারে। রোজার সময় মায়ের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে তা সন্তানের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
রোজা রাখার সময় কিছু সতর্কতা
যদি গর্ভবতী মা রোজা রাখতে চান, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া: রোজা রাখার আগে অবশ্যই গাইনোকলজিস্ট বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। যদি চিকিৎসক রোজা রাখার অনুমতি দেন, তবে বিশেষ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
- সাহরি ও ইফতারে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ: রোজার সময় সাহরি ও ইফতারে প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এতে ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও পানীয় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। শরীরের পানির চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা: রোজা রাখার সময় গর্ভবতী মায়েরা অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং শরীরের পরিবর্তনের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
উপসংহার
গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা রাখা বা না রাখা একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা ধর্মীয় নির্দেশনা ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে নেওয়া উচিত। যদি রোজা রাখা মায়ের বা সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে রোজা না রাখা উত্তম। তবে, রোজা রাখতে ইচ্ছুক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.