ADHD: অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার | ADHD in Bangla

ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ঘটে। এটি মূলত অমনোযোগ, অতিচঞ্চলতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যার কারণে দেখা যায়। ADHD-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে মনোযোগ দিতে পারে না, সহজেই বিভ্রান্ত হয় এবং খুব অস্থির থাকে।

ADHD-এর প্রকারভেদ

ADHD সাধারণত তিনটি প্রকারভেদে বিভক্ত:

  1. অমনোযোগপূর্ণ ADHD: এই ক্ষেত্রে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্করা কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষম হয়। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
    • নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারা।
    • কাজে দ্রুত ভুল করা।
    • কোনো কিছু শেষ করতে সমস্যা হওয়া।
  2. অতিচঞ্চল ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভাবজনিত ADHD: এতে ব্যক্তি সব সময় অস্থির থাকে এবং তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়। লক্ষণগুলো হলো:
    • সবসময় নড়াচড়া করা।
    • যথেষ্ট চিন্তা না করেই কাজ করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া।
    • ধৈর্য কম থাকা।
  3. মিশ্র ADHD: এ ধরনের ADHD-তে অমনোযোগপূর্ণ এবং অতিচঞ্চল উভয় লক্ষণই থাকে। শিশুরা সহজেই মনোযোগ হারায় এবং সবসময় চঞ্চল থাকে।

raju akon youtube channel subscribtion

ADHD-এর কারণ

ADHD-এর নির্দিষ্ট কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে, যেগুলো ADHD-এর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে:

  • জেনেটিক্স: পারিবারিক ইতিহাসে ADHD থাকার সম্ভাবনা বেশি।
  • মস্তিষ্কের বিকাশ: কিছু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিকমতো বিকাশ না হলে ADHD হতে পারে।
  • পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ ADHD-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ADHD-এর লক্ষণ

ADHD-এর লক্ষণগুলো শিশুর শারীরিক এবং মানসিক আচরণে প্রভাব ফেলে। ADHD আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত নীচের লক্ষণগুলো প্রদর্শন করে:

  • অমনোযোগ: স্কুল বা বাড়ির কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা।
  • অতিরিক্ত চঞ্চলতা: সব সময় দৌড়াদৌড়ি করা, এক স্থানে থাকতে না পারা।
  • আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা: সহজেই হতাশ হওয়া বা রেগে যাওয়া।

ADHD-এর চিকিৎসা

ADHD-এর চিকিৎসা মূলত দুই ধরনের হতে পারে: ঔষধগত এবং আচরণগত থেরাপি

  1. ঔষধগত চিকিৎসা: ADHD-এর জন্য কিছু স্টিমুল্যান্ট ঔষধ ব্যবহার করা হয় যা মনোযোগ বৃদ্ধি এবং চঞ্চলতা কমাতে সাহায্য করে।
    • মিথাইলফেনিডেট এবং অ্যামফেটামিন হল ADHD-এর জন্য প্রধানত ব্যবহৃত ঔষধ।
  2. আচরণগত থেরাপি: এই থেরাপিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তায় শিশুর আচরণে পরিবর্তন আনা হয়। এর মাধ্যমে শিশুকে ধৈর্য ধরতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়।
  3. শিক্ষাগত সহায়তা: ADHD আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্কুলে বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের সাহায্যে শিশুরা আরো ভালোভাবে কাজ শিখতে পারে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।

ADHD নিয়ে অভিভাবকদের করণীয়

  • ADHD আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ ধৈর্য ধরতে হবে।
  • নিয়মিত রুটিন তৈরি করা যা তাদের মনোযোগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
  • শিশুকে ছোট ছোট কাজ দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের মনোযোগ ধরে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার

ADHD হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ADHD আক্রান্ত শিশুরা সঠিক চিকিৎসা এবং পারিবারিক সহায়তার মাধ্যমে স্কুল এবং সামাজিক জীবনে উন্নতি করতে সক্ষম হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top