মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের জন্য এই সময়টায় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে কিছু সুন্দর অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা মানসিক স্থিতিশীলতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে সহায়ক হয়।
১. নিয়মিত ধ্যান এবং মাইন্ডফুলনেস চর্চা
মাইন্ডফুলনেস এবং ধ্যান চর্চা মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত রাখতে সহায়ক। দিনে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ধ্যান আপনার মস্তিষ্ককে শিথিল করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম ঘুম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
৩. সৃজনশীল কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত রাখা
সৃজনশীল কাজ যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া, লেখালেখি বা অন্য কোনো শিল্পের চর্চা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। এসব কার্যকলাপ মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
৪. শারীরিক ব্যায়াম করা
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। দৌড়, হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্কে এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. ইতিবাচক চিন্তা চর্চা করা
নেতিবাচক চিন্তা এবং উদ্বেগ দূর করতে ইতিবাচক চিন্তা চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভালো এবং ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অভ্যাস গড়ে তুললে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
৬. সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো
বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। একাকীত্ব দূর করার জন্য নিয়মিত সামাজিক মেলামেশার অভ্যাস তৈরি করা উচিত।
৭. বই পড়া এবং জ্ঞানার্জন করা
বই পড়া মস্তিষ্কের উদ্দীপনা বাড়ায় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। একটি ভালো বই পড়া মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মনোবিজ্ঞান বা জীবনদর্শন সম্পর্কিত বই মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
৮. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো
প্রকৃতির সান্নিধ্য মানসিক প্রশান্তি এবং স্থিতিশীলতা এনে দেয়। গাছপালা, সবুজ পরিবেশ, এবং খোলা আকাশের নিচে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায় এবং মনকে শান্ত করে। সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করা উচিত।
৯. সময় ব্যবস্থাপনা শেখা
অনিয়মিত রুটিন এবং সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে। সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা এবং একটি নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন হালকা থাকে।
১০. নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করা
নিজের অনুভূতিগুলো চাপা না রেখে কাউকে শেয়ার করা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পরিবার, বন্ধু, অথবা কাউন্সেলরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা মানসিক চাপের ভার লাঘব করতে পারে।
উপসংহার
উপরোক্ত ১০টি অভ্যাস কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে কার্যকর হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো চর্চা করলে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।