ADHD ব্রেইনে কি ঘটে? কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়? | What Happens in an ADHD Brain? How to Overcome ADHD?

ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) হচ্ছে একটি সাধারণ মানসিক সমস্যা যা মূলত মনোযোগের অভাব, অতি চঞ্চলতা, এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতার সাথে সম্পর্কিত। এটি মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে কিছু পরিবর্তনের কারণে ঘটে। ADHD-এর সঙ্গে যুক্ত মস্তিষ্কের যে সমস্ত পরিবর্তন ঘটে এবং কীভাবে এই সমস্যার উত্তরণ ঘটানো যায়, তা নিয়ে জেনে নেওয়া জরুরি।

ADHD ব্রেইনে কি ঘটে?

  1. মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যপ্রণালী:
    • ADHD আক্রান্ত মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, বেজাল গ্যাংলিয়া, এবং সেরিবেলাম স্বাভাবিক মস্তিষ্কের তুলনায় একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। এই অংশগুলো মনোযোগ ধরে রাখা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, এবং শৃঙ্খলা মেনে কাজ করতে সাহায্য করে।
  2. ডোপামিনের ঘাটতি:
    • ADHD আক্রান্ত মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার কম থাকে। ডোপামিন হচ্ছে সেই রাসায়নিক যা আনন্দ, মনোযোগ, এবং অভ্যন্তরীণ প্রেরণার সাথে জড়িত। ADHD আক্রান্ত শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের অভাব মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে, লক্ষ্য অর্জনে বাধা দেয়।
  3. নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা কমে যাওয়া:
    • নিউরোট্রান্সমিটারগুলি হল মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে বার্তা বহনকারী রাসায়নিক। ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিউরোট্রান্সমিটার কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় মনোযোগ ও শৃঙ্খলা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
  4. প্রতিক্রিয়া সময়ে বিলম্ব:
    • ADHD আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তিরা সাধারণত কাজের প্রতিক্রিয়া দিতে সময় নেয় এবং তা বিলম্বিত হয়। এটা মূলত মস্তিষ্কের সিগন্যাল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার দুর্বলতার কারণে ঘটে।

raju akon youtube channel subscribtion

কিভাবে ADHD উত্তরণ ঘটানো যায়?

  1. বিহেভিয়ার থেরাপি (Behavior Therapy):
    • ADHD ম্যানেজমেন্টে বিহেভিয়ার থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। এই থেরাপি ADHD আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ, কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি, এবং জীবনে শৃঙ্খলা আনার উপায় শেখায়। এটি শিশুদের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর, বিশেষ করে যখন তা পরিবার বা শিক্ষকের সহযোগিতায় করা হয়।
  2. মেডিকেশন (Medication):
    • ADHD আক্রান্ত মস্তিষ্কে ডোপামিন এবং অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। স্টিমুল্যান্ট এবং নন-স্টিমুল্যান্ট ঔষধ ADHD নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে, ওষুধ সবসময় থেরাপির সাথে ব্যবহার করা উচিত।
  3. মাইন্ডফুলনেস এবং মেডিটেশন:
    • মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনোযোগ ধরে রাখা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্ককে প্রশান্ত করে এবং স্নায়বিক সংযোগগুলোকে পুনরায় সংহত করতে সাহায্য করে।
  4. ডায়েট এবং পুষ্টি:
    • ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ। ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং ভিটামিন যুক্ত করা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।
  5. স্ট্রাকচার্ড রুটিন:
    • ADHD আক্রান্তদের জন্য দৈনন্দিন জীবনে একটি স্ট্রাকচার্ড রুটিন বজায় রাখা অত্যন্ত সহায়ক। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ঘুম, এবং কাজ করার নিয়ম তাদের শৃঙ্খলা মেনে চলতে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  6. ব্যায়াম:
    • নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কে ডোপামিন উৎপাদন বাড়ায় এবং ADHD ম্যানেজমেন্টে সহায়ক। শারীরিক কার্যকলাপ শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

ADHD একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলেও, সঠিক থেরাপি, ওষুধ, এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর থেকে উত্তরণ সম্ভব। মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং সহায়তা প্রদান ADHD আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনকে উন্নত করতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া শিশুর ভবিষ্যৎ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top