স্ট্রোক সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে ঘটে বলে আমরা মনে করি, তবে এটি শিশুদের মধ্যেও হতে পারে, যা Childhood Stroke বা Paediatric Stroke নামে পরিচিত। বাচ্চাদের স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক সময়ে এর লক্ষণগুলো চিনতে পারলে বাচ্চাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
বাচ্চাদের স্ট্রোক কেন হয়?
বাচ্চাদের স্ট্রোকের বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:
- রক্তনালীতে বাধা: যখন মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
- রক্তপাত: মস্তিষ্কের কোন রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণে হতে পারে।
- জন্মগত সমস্যা: কিছু শিশুরা জন্মের সময় থেকেই এমন কিছু জিনগত বা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে জন্ম নেয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
- হার্টের সমস্যা: শিশুদের হার্টের সমস্যা থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
- সংক্রমণ: সংক্রমণ বা ইনফেকশনের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
বাচ্চাদের স্ট্রোকের লক্ষণ:
বাচ্চাদের মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে, এবং এটি বয়সের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- হঠাৎ দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস: বাচ্চার শরীরের কোনো একপাশে হঠাৎ করে দুর্বলতা বা অসাড়তা দেখা দেয়।
- মুখের পরিবর্তন: মুখের একপাশ ঢিলে হয়ে যাওয়া বা কথা বলার সময় সমস্যার সৃষ্টি হওয়া।
- বেশি ঘুমানো বা অজ্ঞান হয়ে পড়া: শিশুটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুমিয়ে থাকতে পারে অথবা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- চোখের সমস্যা: বাচ্চার চোখে হঠাৎ করে সমস্যা দেখা দেয়, যেমন ডাবল দেখা বা একদিকে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
- হাঁটাচলার সমস্যা: হঠাৎ করে চলাফেরায় সমস্যা হতে পারে, এবং শিশুটি ভারসাম্য রক্ষা করতে অসুবিধা বোধ করতে পারে।
বাচ্চাদের স্ট্রোকের চিকিৎসা:
স্ট্রোকের চিকিৎসা শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দ্রুত শুরু করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে:
- প্রাথমিক চিকিৎসা: যত দ্রুত সম্ভব মেডিক্যাল সেবা নেওয়া জরুরি। জরুরি ভিত্তিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
- ফিজিক্যাল থেরাপি: স্ট্রোকের পরে ফিজিক্যাল থেরাপি শিশুর পেশি শক্তিশালী করতে সহায়ক হয় এবং চলাফেরা ও স্বাভাবিক কার্যকলাপে ফিরে আসার জন্য সাহায্য করে।
- ওকুপেশনাল থেরাপি: এটি শিশুর দৈনন্দিন কার্যক্রমে ফিরে আসতে সহায়ক, যেমন খাওয়া, লেখালেখি, এবং নিজের যত্ন নেওয়া।
- স্পিচ থেরাপি: যদি স্ট্রোকের কারণে বাচ্চার কথা বলার সমস্যা হয়, তাহলে স্পিচ থেরাপি কার্যকর হতে পারে।
- মেডিক্যাল চিকিৎসা: শিশুর অবস্থার উপর ভিত্তি করে রক্ত পাতলা করার ওষুধ বা অন্যান্য মেডিক্যাল ইন্টারভেনশন প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়?
বাচ্চাদের মধ্যে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখা: বাচ্চাদের হার্টের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত এবং কোনো হার্টের সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করা।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম বাচ্চার শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে সহায়ক।
- ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ: বাচ্চাদের ইনফেকশন হলে তা দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত, কারণ ইনফেকশনের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
উপসংহার:
বাচ্চাদের স্ট্রোক একটি জটিল এবং গুরুতর সমস্যা হলেও দ্রুত চিকিৎসা ও থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অভিভাবকদের সতর্ক থেকে শিশুদের স্বাস্থ্য পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যাতে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।