অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সংবেদনশীলতার ঘাটতি বা অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, তারা ক্ষুধা, পিপাসা, ক্লান্তি বা অন্যান্য অভ্যন্তরীন অনুভূতি সহজে বুঝতে পারে না বা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, যা সঠিক সময়ে বোঝা এবং সমাধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অটিজম বাচ্চার অভ্যন্তরীন অনুভূতি বোঝার সমস্যা কেন হয়?
- Interoception বা অভ্যন্তরীন সংবেদনশীলতা: Interoception হলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীন অবস্থা বোঝার ক্ষমতা। অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু এই সংবেদনশীলতার সমস্যা অনুভব করে। এর ফলে তারা ক্ষুধা, পিপাসা, ক্লান্তি বা এমনকি টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে দেরি করে।
- সংবেদনশীলতার ঘাটতি: অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সংবেদনশীলতার সমস্যার কারণে তারা তাদের শরীরের সিগন্যালগুলো (যেমন ক্ষুধা লাগা, পিপাসা লাগা, ক্লান্ত হওয়া) ঠিকমতো ধরতে পারে না। এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
- আচরণগত সীমাবদ্ধতা: অনেক অটিজম শিশু তাদের অভ্যন্তরীন অনুভূতিগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে বা অন্যদের বোঝাতে সক্ষম হয় না। এটি তাদের পরিবারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষুধার্ত হলেও তারা খাবার চাইতে পারে না বা ক্লান্ত থাকলেও বিশ্রামের প্রয়োজন বুঝতে পারে না।
সমস্যার সমাধানে কিছু পরামর্শ
- সংবেদনশীল থেরাপি (Sensory Integration Therapy): সংবেদনশীল থেরাপি একটি কার্যকর পদ্ধতি, যা অটিজম শিশুদের অভ্যন্তরীন অনুভূতি বুঝতে এবং শরীরের সিগন্যালগুলো সঠিকভাবে ধরতে সাহায্য করে। একজন অভিজ্ঞ অকুপেশনাল থেরাপিস্টের সাহায্যে এই থেরাপি পরিচালনা করা উচিত।
- রুটিন তৈরি করা: ক্ষুধা, পিপাসা বা বিশ্রামের মতো অভ্যন্তরীন প্রয়োজনগুলো নিয়মিত সময়সূচি অনুযায়ী মেটানোর চেষ্টা করুন। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করলে শিশুর শরীর ধীরে ধীরে এই রুটিনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
- অনুপ্রেরণা এবং নির্দেশনা: শিশুকে তার অভ্যন্তরীন অনুভূতিগুলো বোঝার জন্য ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ দিন। যদি তারা ক্লান্তি বা ক্ষুধার মতো কোনো অভ্যন্তরীন অনুভূতি বোঝায়, তাদের প্রশংসা করুন এবং সেই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
- শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ানো: নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন খেলা, হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম, শরীরের সিগন্যালগুলো সহজে বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শিশুর শরীর ও মন আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠবে।
- শিশুর প্রয়োজনীয় চাহিদা পর্যবেক্ষণ: শিশুর আচরণের প্রতি নজর দিন। ক্ষুধা বা পিপাসা বুঝতে না পারলে তারা হয়তো অন্যভাবে তা প্রকাশ করতে পারে। যেমন: বিরক্তি, কান্না বা আচরণের পরিবর্তন। এগুলো লক্ষ্য করুন এবং তাদের প্রয়োজন বুঝে পদক্ষেপ নিন।
উপসংহার
অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষুধা, পিপাসা, ক্লান্তি বা অন্যান্য অভ্যন্তরীন অনুভূতিগুলো বোঝা কঠিন হতে পারে। তবে সংবেদনশীল থেরাপি এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। শিশুর অভ্যন্তরীন অনুভূতিগুলো বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করুন এবং তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করুন।