অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যা যা শিশুর সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, এবং শারীরিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই সমস্যার মধ্যেও অনেক শিশুই তাদের মায়েদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ভালোবাসা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সফলতার পথে এগিয়ে যায়। আজকের এই গল্পটি এমনই একজন মায়ের মুখ থেকে শোনা যাক, যিনি সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তার সন্তানের জন্য আলোর পথ খুঁজে পেয়েছেন।
সন্তানের প্রথম দিনগুলো
মায়ের ভাষায়, “আমার সন্তানের জন্মের পর আমি তার মধ্যে অন্যরকম কিছু লক্ষ করছিলাম। সে স্বাভাবিক শিশুদের মতো হাসে না, কথা বলে না, এমনকি চোখের সংযোগও খুব কম করত। প্রথমে বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু পরে যখন ডাক্তারের কাছে গেলাম, তারা বললেন আমার সন্তানের অটিজম আছে। এই কথা শুনে আমার পুরো পৃথিবীটা যেন ভেঙে পড়ল।”
অটিজম সম্পর্কে জানার শুরু
প্রথমে অটিজম কী, তা বুঝতেই অনেক সময় লেগেছিল। তবে ধীরে ধীরে মায়ের মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মায়, তিনি তার সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। তিনি অটিজম সম্পর্কিত বই পড়েন, বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেন, এবং বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে শুরু করেন। বাংলাদেশে অনেকগুলো Autism Treatment Center রয়েছে, যেখানে শিশুদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
থেরাপির ভূমিকা
“আমি আমার সন্তানের জন্য অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপির ব্যবস্থা করলাম। বাংলাদেশে এমন কিছু থেরাপি সেন্টার রয়েছে, যেখানে অটিজম শিশুদের জন্য দক্ষ বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। প্রতিদিন আমি তাকে নিয়ে সেসব সেন্টারে যেতাম। থেরাপির মাধ্যমে আমার সন্তানের আচরণে উন্নতি আসতে শুরু করল।”
চ্যালেঞ্জ ও সফলতা
শিশুর থেরাপি করানোর পাশাপাশি তাকে মানসিক ও শারীরিক সহায়তা দিতে হয়েছে। মায়ের ভালোবাসা ও যত্নে ধীরে ধীরে শিশুটি কথা বলতে শুরু করে, সামাজিক সংযোগ স্থাপন করতে শিখে, এবং বিভিন্ন কাজে আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। “এখন আমার সন্তান স্কুলে যায় এবং সে তার সহপাঠীদের সাথে কথা বলে। প্রথমদিকে যা প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল, এখন তা বাস্তব। আমি সত্যিই গর্বিত যে আমি সব বাধা অতিক্রম করে তার জন্য কিছু করতে পেরেছি।”
উপসংহার
অটিজম একটি চ্যালেঞ্জিং সমস্যা হলেও, সঠিক সময়ে চিকিৎসা, থেরাপি, এবং ভালোবাসা দিতে পারলে শিশুরা সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের Autism Treatment Center গুলোতে দক্ষ চিকিৎসক ও থেরাপিস্টদের সহায়তায় অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে। মায়েদের সাহস এবং সন্তানদের প্রতি তাদের ভালোবাসাই এই সফলতার মূল চাবিকাঠি।