অটিজম, যা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) নামেও পরিচিত, একটি জটিল নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যা। এটি সাধারণত শিশুর সামাজিক মেলামেশা, ভাষার বিকাশ এবং আচরণে প্রভাব ফেলে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, “অটিজম কি ভালো হয়?” অটিজম সাধারণত সারা জীবনের জন্য থাকে, তবে সঠিক থেরাপি এবং সহায়তা পেলে একজন অটিজম শিশুও সফল হতে পারে।
আজকের গল্প এক সফল মা ও তার শিশুর যাত্রা নিয়ে, যিনি অটিজমের সাথে লড়াই করে তার জীবনে নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছেন। এই গল্পটি আমাদের দেখায় যে অটিজম সঠিক পরিচর্যা ও থেরাপির মাধ্যমে উন্নতি সম্ভব।
মায়ের ভাষায় সন্তানের সফলতার গল্প:
আমার সন্তান খুব ছোট থেকেই আলাদা আচরণ করত। সামাজিক যোগাযোগে আগ্রহ ছিল না, অন্য শিশুদের সাথে খেলতে চাইত না, এবং কিছু আচরণ পুনরাবৃত্তিমূলক ছিল। আমি জানতাম কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে শুনলাম আমার সন্তান অটিজমে আক্রান্ত, তখন ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
চিকিৎসা ও থেরাপি:
প্রথম দিকে আমি জানতাম না কিভাবে শুরু করব, কিন্তু একাধিক থেরাপি ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করলাম বিভিন্ন থেরাপি। এর মধ্যে প্রধান ছিল:
- অকুপেশনাল থেরাপি: এটি আমার সন্তানের মোটর স্কিলের উন্নতি করেছে।
- স্পিচ থেরাপি: যা তাকে ভাষার বিকাশে সহায়তা করেছে।
- বিহেভিয়ার থেরাপি: এর মাধ্যমে আমি তাকে শিখিয়েছি কিভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়।
প্রাথমিক উন্নতি:
প্রথম প্রথম ফলাফল খুব ধীর ছিল। তবে ধীরে ধীরে আমি লক্ষ্য করলাম, তার আচরণে পরিবর্তন আসছে। স্পিচ থেরাপি নেয়ার পর সে প্রথমে কিছু শব্দ শিখতে শুরু করে। এরপর বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে সে অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করতে শুরু করে।
স্কুল ও সমাজিক জীবনে সাফল্য:
আমার সন্তান এখন স্কুলে যাচ্ছে এবং ভালো করছে। অটিজম থাকলেও তার মধ্যে অনেক গুণাবলী আছে যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। সে এখন তার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারে, এবং আমি গর্বিত যে তার এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে সঠিক থেরাপির মাধ্যমে।
মায়ের বার্তা:
অটিজমে আক্রান্ত সন্তানদের নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সময়মত চিকিৎসা ও থেরাপি শুরু করলে উন্নতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। সঠিক সহায়তা এবং ভালোবাসা পেলে অটিজম শিশুরাও জীবনে সফল হতে পারে। আমি নিজে এর উদাহরণ।
অটিজমের ক্ষেত্রে সঠিক থেরাপি কেন গুরুত্বপূর্ণ:
অটিজম ভালো হয় কিনা, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সঠিক সময়ে সঠিক থেরাপি শুরু করা। থেরাপি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক, শারীরিক এবং সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে। প্রত্যেক শিশুর অবস্থার ভিন্নতা থাকে, তাই তার প্রয়োজন অনুযায়ী থেরাপি প্ল্যান তৈরি করতে হবে।
উপসংহার:
অটিজম একটি চ্যালেঞ্জিং অবস্থা, তবে সঠিক থেরাপি ও যত্নের মাধ্যমে অটিজম শিশুরাও জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে। এই সফলতার গল্পটি প্রমাণ করে যে ভালোবাসা, ধৈর্য, এবং থেরাপির মাধ্যমে জীবনকে নতুন দিশা দেওয়া সম্ভব।