সেরিব্রাল পালসি বাচ্চার হাঁটতে বাধা ক্রাউচ গেইট | Crouch Gait Treatment In Bangladesh

সেরিব্রাল পালসি বাচ্চাদের মধ্যে ক্রাউচ গেইট (Crouch Gait) একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা শিশুর হাঁটার ধরনকে প্রভাবিত করে, যার ফলে হাঁটু বাঁকা অবস্থায় থাকে এবং শরীর সামনে ঝুঁকে থাকে। বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসি বাচ্চাদের ক্রাউচ গেইট সমস্যার চিকিৎসা এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এখানে।

ক্রাউচ গেইট কি?

ক্রাউচ গেইট হলো এক ধরনের চলাচলের সমস্যা যেখানে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর হাঁটু সাধারণ অবস্থানের তুলনায় বেশি বাঁকা থাকে। এ অবস্থায় হাঁটা ও চলাচলের সময় শিশুদের পায়ের পেশিগুলোর অস্বাভাবিক টান দেখা দেয়, যা তাদের ভারসাম্য ও চলাচলকে দুর্বল করে তোলে।

raju akon youtube channel subscribtion

ক্রাউচ গেইটের কারণ

১. পেশির স্প্যাস্টিসিটি: সেরিব্রাল পালসি শিশুদের পায়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত টান বা স্প্যাস্টিসিটি তৈরি হয়। এ কারণে পেশিগুলি সংকুচিত থাকে, যা হাঁটাকে অস্বাভাবিক করে তোলে।

২. হাঁটুর বাঁকা অবস্থান: ক্রাউচ গেইটে হাঁটু সর্বদা বাঁকা থাকে, ফলে হাঁটার সময় শরীর ভারসাম্য হারায়। হাঁটু সোজা করতে না পারার কারণে শিশুদের হাঁটা কষ্টকর হয়ে ওঠে।

৩. আধুনিক থেরাপির অভাব: অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা সঠিক থেরাপি না পেলে বা সময়মতো চিকিৎসা না হলে ক্রাউচ গেইটের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

ক্রাউচ গেইটের লক্ষণ

  • হাঁটুর অস্বাভাবিক বাঁকা অবস্থা
  • পায়ের আঙ্গুল দিয়ে ভর দেওয়া
  • শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা
  • চলাচলের সময় বারবার ভারসাম্য হারানো
  • মাংসপেশির অতিরিক্ত টান এবং দুর্বলতা

ক্রাউচ গেইটের চিকিৎসা | Crouch Gait Treatment

বাংলাদেশে ক্রাউচ গেইটের চিকিৎসা সেরিব্রাল পালসি শিশুদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিচের মতো হতে পারে:

১. ফিজিক্যাল থেরাপি

ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে শিশুর পেশিগুলি সচল করা যায়। এতে মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং হাঁটু বাঁকা হওয়ার সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। শিশুদের পায়ের সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২. অকুপেশনাল থেরাপি

অকুপেশনাল থেরাপি শিশুদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই থেরাপি শিশুদের চলাফেরার দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে এবং শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য বাড়ায়।

৩. ওরথোটিক্স এবং ব্রেসেস

ক্রাউচ গেইটের চিকিৎসার জন্য ওরথোটিক্স এবং ব্রেসেস ব্যবহার করা হয়। এটি হাঁটুর অবস্থান সোজা রাখতে সহায়ক এবং শিশুর ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর।

৪. অস্ত্রোপচার

যদি থেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা কার্যকর না হয়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পায়ের পেশিগুলির টান এবং হাঁটু বাঁকা অবস্থাকে সংশোধন করা যায়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শের ভিত্তিতে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।

৫. বোটক্স ইনজেকশন

মাংসপেশির স্প্যাস্টিসিটি কমানোর জন্য বোটক্স ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পেশিগুলির সংকোচন কমায় এবং হাঁটাকে স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে ক্রাউচ গেইটের চিকিৎসা কেন্দ্র

বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসি শিশুদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। এখানে সেরিব্রাল পালসি ও ক্রাউচ গেইট সমস্যার চিকিৎসা পেতে সক্ষম শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, থেরাপি এবং পরামর্শ সেবা প্রদান করা হয়।

সেরিব্রাল পালসি শিশুদের মধ্যে ক্রাউচ গেইটের সমস্যা ঠিক করতে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিক্যাল থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি এবং অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা যায়। অভিভাবকরা যদি শিশুদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা ও সহায়তা গ্রহণ করেন, তবে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top