পুরুষদের স্তন বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যাকে গাইনোকোমাস্টিয়া (Gynecomastia) বলা হয়। এটি তখন ঘটে যখন স্তনের টিস্যু অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গাইনোকোমাস্টিয়া সাধারণত একটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে এবং এটি কোনো গুরুতর সমস্যা না হলেও শারীরিক এবং মানসিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নিই এর কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত।
পুরুষের স্তন বড় হওয়ার কারণ
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
প্রধান কারণ হলো টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। ইস্ট্রোজেন স্তনের টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়ক, আর টেস্টোস্টেরন এই বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। যখন টেস্টোস্টেরন কমে যায় বা ইস্ট্রোজেন বাড়ে, তখন পুরুষের স্তনের টিস্যু বৃদ্ধি পেতে পারে।
২. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন, অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ ইত্যাদি গাইনোকোমাস্টিয়ার কারণ হতে পারে।
৩. মাদক ও অ্যালকোহলের প্রভাব
অ্যালকোহল, গাঁজা, হেরোইন এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য স্তনের টিস্যু বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এগুলোর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে গাইনোকোমাস্টিয়া দেখা দিতে পারে।
৪. বৃদ্ধ বয়স
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন হ্রাস পায়, যার ফলে ইস্ট্রোজেনের প্রভাব বাড়ে। ফলে স্তনের টিস্যু বৃদ্ধি পায়।
৫. মোটা হওয়া
মোটা হওয়ার কারণে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে, যা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং স্তনের টিস্যু বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
৬. স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো
লিভার, কিডনি, থাইরয়েড সমস্যা, এবং টেস্টিকুলার টিউমারের মতো কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা গাইনোকোমাস্টিয়ার কারণ হতে পারে। এসব রোগ শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।
পুরুষের স্তন বড় হওয়ার চিকিৎসা
গাইনোকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের ওপর। কিছু ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকেই কমে যেতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রক্রিয়া রয়েছে, যা এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
১. ওষুধ
গাইনোকোমাস্টিয়ার চিকিৎসায় কিছু হরমোন থেরাপি ও ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে বা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ নেওয়া উচিত নয়।
২. ওজন কমানো
যদি মোটা হওয়া এর কারণ হয়, তবে ওজন কমানোর মাধ্যমে সমস্যা কমানো সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম স্তনের টিস্যু হ্রাসে সাহায্য করে।
৩. সার্জারি
যদি ওষুধ বা অন্যান্য পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তবে সার্জারি করতে হতে পারে। এতে লিপোসাকশন বা ম্যামোপ্লাস্টি করে অতিরিক্ত টিস্যু অপসারণ করা হয়।
৪. হরমোন থেরাপি
যেসব ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সমস্যা তৈরি করে, সেখানে হরমোন থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ানো হয় এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমানো হয়।
৫. জীবনধারা পরিবর্তন
অ্যালকোহল, মাদকদ্রব্য এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ পরিহার করা গাইনোকোমাস্টিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- অ্যালকোহল এবং মাদক থেকে দূরে থাকা।
- সঠিক ওজন বজায় রাখা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড বা অন্যান্য হরমোনাল ওষুধ না খাওয়া।
- কোনো অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা।
গাইনোকোমাস্টিয়া একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা, তবে এটি মানসিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারায় পরিবর্তন এনে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং সঠিক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।