অস্থিরতা (Restlessness) এমন একটি মানসিক অবস্থা যা আমাদের প্রায় সকলের জীবনে কখনও না কখনও দেখা দেয়। এটি একটি স্বাভাবিক অনুভূতি হলেও, দীর্ঘমেয়াদী বা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে এটি মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অস্থিরতা সাধারণত উদ্বেগ, মানসিক চাপ, বা অন্য কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ফলাফল হিসেবে দেখা দেয়।
অস্থিরতার লক্ষণ
অস্থিরতার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে, যা প্রায়শই মানসিক অস্বস্তির ইঙ্গিত দেয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
১. মনের স্থিরতা না থাকা: কোনো কাজ বা চিন্তায় মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হওয়া। একজন ব্যক্তি এক কাজ থেকে আরেক কাজে বারবার মনোযোগ স্থানান্তর করেন কিন্তু কোনো কাজেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না।
২. অতিরিক্ত চিন্তা বা উদ্বেগ: অস্থিরতার কারণে একজন ব্যক্তি একটানা চিন্তায় ডুবে থাকতে পারেন, যা উদ্বেগকে বাড়িয়ে দেয়। এটি ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে চাপ এবং উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
৩. ঘুমের সমস্যা: অস্থিরতা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় মস্তিষ্কের অতিরিক্ত সক্রিয়তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. শরীরের অতিরিক্ত চলাচল: হাত, পা, বা শরীরের অন্য কোনো অংশ বারবার নাড়াচাড়া করা, যা প্রায়শই চাপ বা উদ্বেগের কারণে ঘটে থাকে।
৫. অবিরাম মন খারাপ: একজন ব্যক্তি যদি সবসময় খারাপ মন নিয়ে থাকেন, এবং এর ফলে অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে না পারেন, তবে এটি অস্থিরতার লক্ষণ হতে পারে।
অস্থিরতার কারণ
অস্থিরতা সাধারণত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা অন্য কোনো মানসিক রোগের ফলাফল। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. উদ্বেগ (Anxiety): উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা একজন ব্যক্তির মধ্যে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। উদ্বেগের কারণে একজন ব্যক্তি ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন।
২. অবসাদ (Depression): অবসাদের কারণে মানুষ প্রায়ই অস্থিরতা অনুভব করে। মন-মেজাজ খারাপ থাকলে তারা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না, যার ফলে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
৩. অ্যাডিএইচডি (ADHD): অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর অন্যতম লক্ষণ হলো অস্থিরতা। এ ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারেন না এবং অযথা হাত-পা নাড়তে থাকেন।
৪. ক্যাফেইন বা অন্যান্য উত্তেজক পদার্থের প্রভাব: অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ বা অন্য উত্তেজক পদার্থের প্রভাবে অস্থিরতা বাড়তে পারে। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্কের প্রভাব শরীরের ওপর অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
করণীয়
অস্থিরতার চিকিৎসা ও মোকাবেলা করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. মননশীলতা ও ধ্যান: মননশীলতা চর্চা এবং ধ্যান অস্থিরতা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান করলে মনের স্থিরতা ফিরে আসে এবং অস্থিরতা কমে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক ব্যায়াম মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে এন্ডোরফিন নামে একটি হরমোন নির্গত হয়, যা মনের অস্থিরতা কমাতে সহায়ক।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের অভাব অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে পারলে অস্থিরতা কমানো সম্ভব।
৪. থেরাপি: সাইকোথেরাপি, বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), অস্থিরতা মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা এবং সমস্যা নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে অস্থিরতা কমানো সম্ভব।
৫. মেডিকেশন: চরম অস্থিরতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিকেশন নেওয়া যেতে পারে। তবে এটি কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
অস্থিরতা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, দীর্ঘমেয়াদী বা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে এটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। তাই অস্থিরতা অনুভব করলে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
