বড় মানুষের বাচ্চা সুলভ আচরণ: মানসিক রোগের লক্ষণ?

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শিশুসুলভ আচরণ কখনো কখনো দেখা যেতে পারে। এটি একদিকে প্রাকৃতিক, আবার অন্যদিকে মজারও হতে পারে। তবে যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে শিশুসুলভ আচরণ প্রদর্শন করেন এবং তা তার দৈনন্দিন জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন এটি একটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের আচরণকে প্রায়ই রেগ্রেশন বা আচরণগত পশ্চাদপসরণ বলা হয়।

রেগ্রেশন: বাচ্চা সুলভ আচরণের কারণ

রেগ্রেশন হল একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি মানসিক চাপ, ট্রমা, বা অবসাদের কারণে শৈশবের আচরণ বা প্রতিক্রিয়ার দিকে ফিরে যায়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং মানসিক রোগের একাধিক ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। নিচে এই আচরণের কিছু সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হলো:

১. অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা ট্রমা: কঠিন পরিস্থিতি, মানসিক চাপ, বা ট্রমা একজন ব্যক্তিকে শৈশবের আচরণের দিকে ফিরে যেতে প্ররোচিত করতে পারে। এটি এক ধরনের আত্মরক্ষা বা নিজেকে আরামের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা হতে পারে, যা রেগ্রেশন সৃষ্টি করে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ: উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাকে বাচ্চাসুলভ আচরণের দিকে ধাবিত করতে পারে। উদ্বেগের কারণে ব্যক্তি শিশুসুলভ ভাষা, অভ্যাস, বা আচরণে ফিরে যেতে পারেন।

৩. ডিপ্রেশন বা অবসাদ: অবসাদের সময় একজন ব্যক্তি নিজের মধ্যে শৈশবের সহজ এবং নিরাপদ দিনগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন। এই আকর্ষণ ব্যক্তি বিশেষে শিশুসুলভ আচরণ বা বাচ্চাদের মতো প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের কারণ হতে পারে।

৪. অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD): অটিজমের সাথে সম্পর্কিত শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আচরণগত রেগ্রেশন দেখা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে শৈশবের আচরণের দিকে ফিরে যেতে পারেন।

৫. বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD): বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD) আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আচরণগত রেগ্রেশন দেখা দিতে পারে। মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে এই ধরনের রেগ্রেশন দেখা দেয়।

লক্ষণসমূহ

বড় মানুষের বাচ্চা সুলভ আচরণের লক্ষণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

  • শিশুসুলভ ভাষা ব্যবহার করা: একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি শিশুসুলভ শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করেন।
  • খুব সহজ বা অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে কান্না করা: ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অযথা কান্না বা চিৎকার করা।
  • নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি: স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক আচরণে যেখানে তারা স্বাধীন থাকেন, সেখানে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়া।
  • খাবারের বিষয়ে অদ্ভুত আচরণ: বাচ্চাদের মতো আচরণ করে খাবার এড়িয়ে চলা বা বিশেষ ধরনের খাবারের প্রতি আসক্তি।
  • খেলাধুলার প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ: বাচ্চাদের খেলনা বা গেমের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া।

করণীয়

রেগ্রেশন বা শিশুসুলভ আচরণের চিকিৎসা এবং মোকাবেলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

১. থেরাপি: কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) বা সাইকোথেরাপি রেগ্রেশন মোকাবেলা করতে সহায়ক হতে পারে। থেরাপিস্ট একজন ব্যক্তিকে তার মানসিক অবস্থা বুঝতে এবং এর সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারেন।

২. সমাজিক সহায়তা: পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা এই ধরনের আচরণ পরিচালনা করতে সহায়ক হতে পারে। তারা ব্যক্তিকে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং শৈশবের আচরণের দিকে ফিরে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন।

৩. ধ্যান ও মননশীলতা: ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং মননশীলতা রেগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে ব্যক্তিকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

৪. মেডিকেশন: গুরুতর পরিস্থিতিতে চিকিৎসক প্রয়োজন হলে মেডিকেশন দিতে পারেন যা এই ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

বড় মানুষের বাচ্চা সুলভ আচরণ কোনো মজার বিষয় নয়, বরং এটি একটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। রেগ্রেশন বা আচরণগত পশ্চাদপসরণ প্রায়ই মানসিক চাপ, ট্রমা, উদ্বেগ, বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার ফলে ঘটে। এই সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও সহায়তা গ্রহণ করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, এবং এর মধ্যে ছোটখাটো আচরণগত পরিবর্তনগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top