শীতকাল মানে একদিকে যেমন ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশায় ঢাকা সকাল, এবং ছুটির মৌসুম, অন্যদিকে তেমনি এটি কিছু মানুষের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং সময় হতে পারে। শীতকালে বিষন্নতা বা সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার (SAD) নামে পরিচিত একটি মানসিক রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই রোগটি বিশেষত শীতকালে দেখা দেয় এবং এর কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা সময়মতো চিন্হিত করা জরুরি।
শীতকালীন বিষন্নতার লক্ষণ
- অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রবণতা: শীতকালে অনেকেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুমাতে থাকেন। তবে বিষন্নতার কারণে ঘুমের পরও ক্লান্তি কাটে না, যা সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারের একটি লক্ষণ।
- আনন্দহীনতা: এমনকি শীতকালীন ছুটির সময়ও, যা সাধারণত আনন্দের সময় হিসেবে বিবেচিত হয়, SAD আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পান না। তাদের পছন্দের কাজগুলোতেও আর আগ্রহ থাকে না।
- অবসাদ এবং ক্লান্তি: শীতকালে বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময় ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত অনুভব করেন। তারা কাজ করার শক্তি বা উৎসাহ পান না এবং দিন দিন আরও অলস হয়ে পড়েন।
- আত্মমর্যাদা হ্রাস: বিষন্নতার সময় ব্যক্তি নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। তারা নিজেদের অযোগ্য, ব্যর্থ বা অপর্যাপ্ত মনে করতে থাকে, যা তাদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায়।
- ওজন বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: SAD-এর একটি সাধারণ লক্ষণ হল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই সময়ে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে একাকিত্বের মধ্যে ডুবে যান। তারা বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েন।
- মনোযোগের অভাব: SAD-এর কারণে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কাজ বা পড়াশোনায় মন বসাতে সমস্যা হয় এবং ব্যক্তির কর্মক্ষমতা কমে যায়।
- উদ্বেগ এবং চরম চিন্তা: শীতকালীন বিষন্নতা উদ্বেগ বাড়াতে পারে। তারা সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে এবং চরম চিন্তায় ভোগেন।
করণীয়
শীতকালে বিষন্নতার লক্ষণগুলো সনাক্ত করা মাত্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নিচে কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো:
- হালকা থেরাপি: লাইট থেরাপি SAD-এর একটি সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উজ্জ্বল আলোয় বসা মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম মন ভালো রাখতে সহায়ক। শীতকালেও ইনডোর ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।
- সামাজিক সংযোগ: পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিষন্নতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শীতকালীন বিষন্নতার সময়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে, কার্বোহাইড্রেটের অতিরিক্ত গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি শীতকালীন বিষন্নতার লক্ষণগুলো তীব্র হয়, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ বা থেরাপি সুপারিশ করতে পারেন।
- ধ্যান এবং যোগব্যায়াম: ধ্যান এবং যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে স্থির রাখতে সহায়ক। শীতকালে বিষন্নতা প্রতিরোধে এগুলো কার্যকর হতে পারে।

শীতকালে বিষন্নতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা। এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি সুরক্ষিত রাখতে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।