৬ থেকে ১০ মাস বয়সেও সেরিব্রাল পালসির সম্ভাবনা বুঝার উপায় | Symptoms of Cerebral Palsy

সেরিব্রাল পালসি (CP) একটি নিউরোমাসকুলার অবস্থার নাম যা শিশুর ব্রেনে ক্ষতির কারণে ঘটে এবং এটি শারীরিক চলাফেরা এবং পেশি নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করে। শিশুদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি সাধারণত জীবনের প্রথম দুই বছরে ধরা পড়ে। তবে ৬ থেকে ১০ মাস বয়সের মধ্যেই কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা সেরিব্রাল পালসির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

এখানে ৬ থেকে ১০ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসির কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

১. মাইলস্টোনে দেরি হওয়া:

শিশুর শারীরিক বিকাশে মাইলস্টোনে দেরি হলে তা সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ হতে পারে। যেমন, ৬ মাসে শিশুর বসতে শেখা, ৮ মাসে হামাগুড়ি দেওয়া বা ১০ মাসে দাঁড়ানোর চেষ্টা না করা। যদি শিশুটি এসব মাইলস্টোনে পৌঁছাতে দেরি করে, তা চিন্তার কারণ হতে পারে।

২. পেশি টোনে অস্বাভাবিকতা:

সেরিব্রাল পালসির অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পেশির টোনে অস্বাভাবিকতা। ৬ থেকে ১০ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে পেশি খুব শক্ত বা খুব নরম হয়ে গেলে তা সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। যেমন, শিশুর পা বা হাত স্থিরভাবে রাখা না যেতে পারা বা অতিরিক্ত শক্ত বা নমনীয় অনুভূত হওয়া।

৩. শরীরের অস্বাভাবিক ভঙ্গি:

শিশুর শারীরিক ভঙ্গিতে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। হাত বা পা অস্বাভাবিকভাবে বাঁকা রাখা, শরীরের কোনো অংশের পেশি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, বা শরীরের এক দিক বেশি ব্যবহার করা ইত্যাদি লক্ষণগুলো সেরিব্রাল পালসির ইঙ্গিত দিতে পারে।

৪. হাত বা পায়ের নড়াচড়ায় সমস্যা:

যদি শিশু হাত বা পা স্বাভাবিকভাবে না নাড়াতে পারে বা শরীরের একদিকে ঝুঁকে থাকে, তাহলে এটি সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া শিশু এক হাতে কোনো বস্তু ধরতে না পারা বা হাতে নেওয়া জিনিস সহজে ফেলে দেওয়া এমন সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়ে।

৫. শরীরের ভারসাম্যে সমস্যা:

সেরিব্রাল পালসির শিশুরা দাঁড়ানো বা বসার সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। ১০ মাস বয়সেও শিশুর শরীরের ভারসাম্যে গুরুতর সমস্যা থাকলে সেটি সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ হতে পারে।

৬. রিফ্লেক্স অস্বাভাবিকতা:

স্বাভাবিকভাবে শিশুরা জন্মের সময় কিছু প্রাথমিক রিফ্লেক্স নিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এসব রিফ্লেক্স দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং স্বাভাবিক সময়ের পরে থাকে।

করণীয়:

১. প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি আপনার মনে হয়, আপনার শিশুর মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিচ্ছে, তাহলে শিশুর নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে দ্রুত পরামর্শ করুন।

২. ফিজিক্যাল থেরাপি: সেরিব্রাল পালসি শনাক্ত হলে ফিজিক্যাল থেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

৩. অকুপেশনাল থেরাপি: অকুপেশনাল থেরাপি শিশুর দৈনন্দিন কাজগুলোতে সাহায্য করতে পারে এবং জীবনযাপনের মান উন্নত করতে পারে।

৪. প্রারম্ভিক হস্তক্ষেপ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা, শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সাহায্য করতে পারে।

উপসংহার:

সেরিব্রাল পালসির প্রাথমিক লক্ষণগুলো সময়মতো শনাক্ত করা গেলে, দ্রুত এবং কার্যকরী চিকিৎসা শুরু করা যায়। ৬ থেকে ১০ মাস বয়সে এসব লক্ষণ দেখা দিলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিশুর শারীরিক বিকাশের প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা তার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top