ক্যালসিয়াম মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। এটি শুধু হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ নয়, পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্র, পেশি এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতার জন্যও অত্যাবশ্যক। আমাদের শরীর ক্যালসিয়াম উৎপাদন করতে পারে না, তাই খাদ্য থেকেই ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে হয়। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে হাড় মজবুত থাকে, এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায়।
আসুন জেনে নিই ক্যালসিয়ামের ১০টি প্রাকৃতিক উৎস, যা আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
১. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য সবচেয়ে পরিচিত। দুধ, পনির, দই ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এক গ্লাস দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা শরীরের ক্যালসিয়ামের দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক।
২. সামুদ্রিক মাছ
সালমন ও সার্ডিনের মতো সামুদ্রিক মাছ ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। বিশেষ করে মাছের হাড় সহকারে খেলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আরও বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও, সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডেরও সমৃদ্ধ উৎস।
৩. সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। বিশেষ করে পালং শাক, কেল শাক, ব্রোকলি এবং বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। এগুলো হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
৪. বাদাম
বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিশেষ করে আমন্ড এবং আখরোট ক্যালসিয়ামের অন্যতম ভালো উৎস। আমন্ডের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। বাদাম শুধু ক্যালসিয়ামের চাহিদাই পূরণ করে না, বরং শরীরে প্রয়োজনীয় ফ্যাট ও প্রোটিনও সরবরাহ করে।
৫. তিল
তিলের বীজ ক্যালসিয়ামের একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উৎস। তিলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তিলের তেলও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
৬. সয়াবিন ও সয়া পণ্য
সয়াবিন এবং এর বিভিন্ন পণ্য, যেমন টোফু এবং সয়া দুধ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। টোফুতে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য উপকারী। এছাড়া সয়া দুধের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
৭. অরেঞ্জ বা কমলালেবু
ফলমূলের মধ্যে কমলালেবু বা অরেঞ্জ ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। নিয়মিত অরেঞ্জ খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
৮. চিয়া বীজ
চিয়া বীজ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং এটি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়ক। প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া বীজে প্রায় ১৭৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া চিয়া বীজে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা দেহের কোষ রক্ষা করে।
৯. ড্রাইড ফিগ বা শুকনো ডুমুর
শুকনো ডুমুর বা ফিগ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো ডুমুরে প্রায় ১৬২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এটি হাড় মজবুত করতে সহায়ক এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
১০. ডিম
ডিমের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। যদিও সরাসরি খোসা খাওয়া হয় না, তবে প্রক্রিয়াজাত করে ডিমের খোসার পাউডারও ব্যবহার করা যায়। ডিমের ভেতরের অংশে কিছু পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা নিয়মিত ডিম খেলে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সহায়ক।
শরীরের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। হাড় ও দাঁতের গঠনে এবং দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ক্যালসিয়াম অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। উপরোক্ত প্রাকৃতিক উৎসগুলো থেকে নিয়মিত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে হাড় মজবুত হবে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬