সেরিব্রাল পালসি কেন হয়: কারণ ও ব্যাখ্যা

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হল একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক অবস্থা যা মূলত মস্তিষ্কের বিকাশে জটিলতা বা আঘাতের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে জন্মের আগে, জন্মের সময়, বা জন্মের পরবর্তী প্রাথমিক সময়কালে ঘটে থাকে। এই অবস্থাটি সাধারণত শরীরের পেশী নিয়ন্ত্রণ এবং আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে, যা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।

সেরিব্রাল পালসির কারণসমূহ:

সেরিব্রাল পালসি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, এবং বেশিরভাগ কারণই মস্তিষ্কের বিকাশের সময় বা সেই সময়ের পর স্নায়বিক সমস্যার সাথে জড়িত।

raju akon youtube channel subscribtion

১. জন্মের আগে মস্তিষ্কের আঘাত:

সেরিব্রাল পালসির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল জন্মের আগেই মস্তিষ্কের আঘাত। গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বিকাশ বা আঘাতের কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটি গর্ভাবস্থায় মায়ের অসুস্থতা বা সংক্রমণের কারণে ঘটতে পারে।

২. মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব (Hypoxia):

জন্মের সময় শিশুর মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না হলে, তা সেরিব্রাল পালসির কারণ হতে পারে। প্রসবকালীন জটিলতা, যেমন প্রসবকালীন আঘাত, নাভির জটিলতা বা শিশুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়।

৩. মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা (Stroke):

যখন শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হয় না, তখন মস্তিষ্কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি জন্মের আগে বা পরে উভয় সময়ে ঘটতে পারে, যা সেরিব্রাল পালসির কারণ হতে পারে।

৪. সংক্রমণ:

গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো ধরনের সংক্রমণ যেমন রুবেলা, সাইটোমেগালোভাইরাস, টক্সোপ্লাজমোসিস বা হার্পস ভাইরাস আক্রান্ত হলে তা শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে এবং সেরিব্রাল পালসি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, শিশুর জন্মের পরে মেনিনজাইটিস বা এনসেফেলাইটিসের মতো মস্তিষ্কের সংক্রমণও সেরিব্রাল পালসির কারণ হতে পারে।

৫. প্রিম্যাচিউর বেবি:

অকাল জন্ম (প্রিম্যাচিউর) বা নিম্ন ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের সেরিব্রাল পালসি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ, তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ পুরোপুরি সম্পন্ন হয় না, এবং তারা জন্মের পরে সহজেই নানা ধরনের সংক্রমণ বা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে।

৬. জেনেটিক মিউটেশন:

কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক পরিবর্তন বা মিউটেশন সেরিব্রাল পালসির কারণ হতে পারে। মস্তিষ্কের বিকাশে জিনগত ত্রুটি থাকলে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্ষমতা বিঘ্নিত হতে পারে, যা সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

৭. দুর্ঘটনা বা শারীরিক আঘাত:

জন্মের পর শিশুর মাথায় গুরুতর আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে সেরিব্রাল পালসি হতে পারে। বিশেষ করে ছোট বয়সে, মস্তিষ্ক খুবই স্পর্শকাতর থাকে, এবং কোনো ধরনের আঘাত মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

উপসংহার:

সেরিব্রাল পালসি সাধারণত মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বিকাশ বা আঘাতের ফলে ঘটে থাকে। জন্মের আগে, সময়, বা পরে মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে এটি হতে পারে। যদিও এর নির্দিষ্ট কারণ জানা অনেক সময় কঠিন, কিন্তু কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, চিকিৎসা, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ এই ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top