মুখে এলার্জি কেন হয়: কারণ ও প্রতিকার

মুখে এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এলার্জি হলে ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি, ফোলা, অথবা ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া দেখা দেয়। এটি ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেন বা পরিবেশগত কারণের কারণে ঘটে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, মুখে এলার্জি কেন হয় এবং এর প্রতিকার কী হতে পারে।

মুখে এলার্জির কারণ:

১. অ্যালার্জেনযুক্ত প্রসাধনী বা স্কিন কেয়ার পণ্য:
মুখের ত্বকে ব্যবহার করা কোনো প্রসাধনী, মেকআপ বা স্কিন কেয়ার পণ্যের মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদান ত্বকের জন্য সহনীয় নাও হতে পারে। এতে মুখে চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

২. খাদ্য অ্যালার্জি:
কিছু খাবার যেমন বাদাম, দুধ, ডিম, চিংড়ি ইত্যাদি খাবার মুখে এলার্জির কারণ হতে পারে। এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরপরই মুখে র‍্যাশ, ফোলা, বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. পরিবেশগত অ্যালার্জি:
ধুলাবালি, পলেন, প্রাণীর লোম, ফাঙ্গাসের স্পোর ইত্যাদি পরিবেশগত অ্যালার্জেন মুখে সংস্পর্শে এলে ত্বকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

৪. তাপমাত্রা পরিবর্তন:
বেশি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন হলে ত্বকে এলার্জি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে ঠান্ডার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে মুখে ফুসকুড়ি বা চুলকানি হতে পারে।

৫. মেডিসিন বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া:
কিছু ওষুধ গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মুখে এলার্জি হতে পারে। যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক, পেইনকিলার, বা কিছু প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের কারণে ত্বকের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

৬. জেনেটিক ফ্যাক্টর:
জেনেটিক কারণে অনেকের ত্বক এলার্জি প্রবণ হতে পারে। পরিবারের কারো মধ্যে এলার্জির সমস্যা থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মেও হতে পারে।

মুখে এলার্জির প্রতিকার:

১. অ্যালার্জেন সনাক্ত করুন:
এলার্জি হওয়ার মূল কারণটি সনাক্ত করা সবচেয়ে জরুরি। কোন প্রসাধনী, খাবার বা পরিবেশগত ফ্যাক্টর মুখে এলার্জির কারণ হতে পারে তা বুঝে নিন এবং তা এড়িয়ে চলুন।

২. ত্বক পরিষ্কার রাখুন:
প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার রাখুন। এলার্জির সময় কোনো হার্শ বা কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। মুখ ধোয়ার জন্য হালকা ও জেন্টল ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।

৩. ঠান্ডা কমপ্রেস ব্যবহার করুন:
ত্বকের চুলকানি বা ফোলাভাব কমাতে ঠান্ডা কমপ্রেস ব্যবহার করুন। এটি মুখের ত্বক ঠান্ডা রাখতে এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করবে।

৪. এন্টিহিস্টামিন গ্রহণ করুন:
যদি মুখে অ্যালার্জি খুব বেশি মাত্রায় হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিহিস্টামিন ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন। এটি অ্যালার্জির লক্ষণ কমিয়ে দেবে।

৫. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন:
ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এজন্য একটি ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বককে আর্দ্র রাখবে এবং শুষ্কতা দূর করবে।

৬. অ্যালার্জি টেস্ট করান:
যদি বারবার মুখে এলার্জি দেখা দেয়, তবে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে অ্যালার্জি টেস্ট করান। এতে করে কোন জিনিসের কারণে আপনার এলার্জি হচ্ছে তা নির্ণয় করা যাবে।

সাবধানতা:

  • এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে মুখে হাত দেওয়া বা চুলকানো থেকে বিরত থাকুন।
  • ত্বকে অতিরিক্ত প্রসাধনী বা হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
  • এলার্জি হওয়ার পরপরই মুখে কোনো রাসায়নিক পণ্য বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করবেন না।
  • নিয়মিত সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখুন।

উপসংহার:

মুখে এলার্জির সমস্যা খুবই বিরক্তিকর হলেও সঠিক যত্ন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যালার্জেন সনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলুন এবং ত্বকের যত্নে সঠিক পদ্ধতি মেনে চলুন। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top