টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যা খুবই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকটকের ভিডিওতে সর্বদা নিজেকে উপস্থাপন করার চাপ, লাইক বা কমেন্টের জন্য প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করা এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রবণতা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলছে।
১. উপস্থাপনার চাপ:
টিকটকে নিজেকে সব সময় সেরা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা মানসিক চাপের একটি বড় কারণ। তরুণরা মনে করে, তাদের ভিডিওতে ভালো লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার না পেলে তারা ব্যর্থ। এই মানসিকতা থেকে তাদের মধ্যে চাপ এবং হতাশা সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগের জন্ম দেয়।
২. অনিরাপত্তার বোধ:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের জীবন ও সাফল্য দেখে নিজেদের জীবনকে ছোট এবং তুচ্ছ মনে করা তরুণদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকটকে প্রচুর সফল ও সুন্দর জীবনধারার ভিডিও দেখা যায়, যা দেখে অন্যরা নিজেদের জীবনে অসন্তুষ্টি বোধ করতে শুরু করে। এই অনিরাপত্তার বোধ মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে।
৩. নেতিবাচক মন্তব্য ও বুলিং:
টিকটক ভিডিওগুলিতে নেতিবাচক মন্তব্য এবং সাইবার বুলিং তরুণদের আত্মবিশ্বাসের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যারা সামাজিকভাবে একটু সংবেদনশীল, তাদের মধ্যে এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য উদ্বেগ ও বিষণ্নতার জন্ম দেয়। এই ধরনের আচরণ থেকে ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যার উৎপত্তি হয় এবং তারা সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৪. ঘুমের ব্যাঘাত:
টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ব্যয় করার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে রাতে ভিডিও দেখা এবং ভিডিও তৈরি করার অভ্যাস তরুণদের ঘুমের রুটিনকে ধ্বংস করে দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না, যার ফলে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়ে।
উদ্বেগ কমানোর উপায়:
যদিও টিকটক ব্যবহারের মাধ্যমে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে, তবে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করে এটি কমানো সম্ভব।
১. সীমিত ব্যবহার:
সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার সীমিত করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় টিকটক বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে ব্যয় না করার নিয়ম মেনে চলা উচিত।
২. ডিজিটাল ডিটক্স:
ডিজিটাল ডিটক্স অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টিকটক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই সময়ে বই পড়া, শরীরচর্চা, বা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
৩. আত্মমর্যাদা বাড়ানো:
টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মের থেকে নিজেদের মূল্যায়ন না করে, ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং আত্মমর্যাদা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। নিজের জীবন এবং সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
৪. মাইন্ডফুলনেস এবং মেডিটেশন:
উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমানোর জন্য মাইন্ডফুলনেস এবং মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ধ্যান এবং মনোযোগ ধরে রাখার মাধ্যমে মনের প্রশান্তি ফিরিয়ে আনা যায়।
টিকটক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলির অপব্যবহার তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। যদিও এটি বিনোদনের একটি মাধ্যম, কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই, আমাদের উচিত সচেতন হওয়া, এবং তরুণদেরকে সীমিত এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করা। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকতে সঠিক পন্থায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা এবং ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।