মাঝে মাঝে মনে হয় চিৎকার করে কান্না করি: এই অনুভূতির কারণ ও করণীয়

কখনো কখনো মনে হতে পারে যে আপনি চিৎকার করে কান্না করতে চান, কিন্তু সেই আবেগকে প্রকাশ করতে পারছেন না। এমন অনুভূতি মানুষের জীবনে স্বাভাবিক হলেও, যদি এটি ঘনঘন ঘটে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে এটি উদ্বেগজনক হতে পারে। এই অনুভূতির পিছনের কারণগুলি কী হতে পারে, এবং এর সমাধান কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে।

চিৎকার করে কান্না করার অনুভূতির পেছনের কারণসমূহ

১. মানসিক চাপ (Stress):

  • দৈনন্দিন জীবনের চাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কাজের চাপ, বা আর্থিক সমস্যা থেকে তৈরি হওয়া মানসিক চাপ আপনাকে ভেতরে ভেতরে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই চিৎকার বা কান্নার মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে চান।

raju akon youtube channel subscribtion

২. অধৈর্য্য বা হতাশা (Frustration):

  • যখন আপনি কোনো সমস্যা বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হন যা আপনি সামলাতে পারছেন না, তখন হতাশা জন্মায়। এই হতাশা কখনো কখনো চিৎকার করে কান্নার রূপ নিতে পারে।

৩. বিষণ্নতা (Depression):

  • বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের সময় মন মেজাজে অসঙ্গতি দেখা দেয়। এতে জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যায় এবং অনেক সময় চিৎকার করে কান্নার ইচ্ছা জাগতে পারে।
  1. আত্মসম্মানবোধের অভাব (Low Self-Esteem):
    • নিজের প্রতি অপ্রত্যাশিত মনোভাব বা আত্মসম্মানবোধের অভাবের কারণে নিজের প্রতি অসন্তুষ্টি জন্মাতে পারে, যা চিৎকার করে কান্নার ইচ্ছা তৈরি করতে পারে।
  2. ট্রমা বা অতীতের অভিজ্ঞতা (Trauma or Past Experiences):
    • অতীতের কোনো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বা ট্রমা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। এই ধরনের ঘটনা থেকে চিৎকার করে কান্নার ইচ্ছা হতে পারে।

এই অনুভূতির সমাধানের উপায়

১. আবেগ প্রকাশ করুন:

  • অনুভূতিগুলি চেপে না রেখে নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে কথা বলুন। আবেগ প্রকাশ করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন হালকা হয়।

২. মনোযোগের পরিবর্তন:

  • যখন এই ধরনের অনুভূতি আসে, তখন মনোযোগ অন্য কোথাও সরিয়ে নিন। আপনার পছন্দের কিছু করতে পারেন, যেমন গান শোনা, ছবি আঁকা, বা হাঁটতে যাওয়া।

৩. লিখে প্রকাশ করুন:

  • কাগজে আপনার অনুভূতিগুলি লিখুন। এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি যা আপনার মনের জট খুলে দেয় এবং আবেগের ভার কমায়।
  1. প্রশান্তির জন্য সময় বের করুন:
    • প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে একটু সময় দিন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কার্যকলাপ মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে।
  2. পেশাদার সহায়তা নিন:
    • যদি এই অনুভূতি নিয়মিতভাবে ফিরে আসে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ। থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

কখন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করবেন?

  • যদি এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আপনার কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।
  • যদি আপনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি পান।
  • যদি চিৎকার করে কান্না করার ইচ্ছার সাথে শারীরিক উপসর্গ যেমন মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, বা শ্বাসকষ্ট হয়।

উপসংহার

চিৎকার করে কান্না করার ইচ্ছা একটি স্বাভাবিক আবেগ, তবে এটি যদি নিয়মিত ঘটে এবং আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে, তাহলে এটি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। সঠিক সমাধান ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবেন এবং পুনরায় মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাবেন।


ঠিকানা: পিনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top