বারবার বাজে চিন্তা আসে কেন? এবং এর জন্য সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক যা নিজের উপর প্রয়োগ করা যায়

বারবার বাজে চিন্তা আসা (Repetitive Negative Thoughts) মানসিক অস্থিরতার একটি প্রধান লক্ষণ, যা উদ্বেগ, হতাশা বা কোনো মানসিক চাপের কারণে ঘটে। এই ধরনের চিন্তা সাধারণত অতীতের কোন ঘটনা বা ভবিষ্যতের কোন আশঙ্কা নিয়ে ঘটে এবং এতে ব্যক্তি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।

বারবার বাজে চিন্তা আসার কারণ

  1. উদ্বেগ: উদ্বেগগ্রস্ত ব্যক্তি প্রায়ই ভবিষ্যতের বিষয়ে বাজে চিন্তা করেন এবং এসব চিন্তাগুলো বারবার ফিরে আসে।
  2. হতাশা: হতাশা বা ডিপ্রেশনের সময় অতীতের কোন ব্যর্থতা বা দুঃখজনক ঘটনার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়।
  3. মানসিক চাপ: মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে অনবরত নেতিবাচক চিন্তা হতে পারে যা মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করে।
  4. আত্মবিশ্বাসের অভাব: নিজেকে নিচু মনে করা বা অক্ষম ভাবার কারণে বাজে চিন্তা মাথায় আসে।
  5. ট্রমা বা আঘাত: কোনো মানসিক বা শারীরিক আঘাত বা দুঃখজনক ঘটনা ঘটার পর এর পুনরাবৃত্তি চিন্তার মাধ্যমে হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

বারবার বাজে চিন্তা কমানোর জন্য সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক যা নিজের উপর প্রয়োগ করা যায়

1. কগনিটিভ পুনর্গঠন (Cognitive Restructuring):

কীভাবে করবেন:

  • প্রথমে বাজে চিন্তাগুলিকে চিহ্নিত করুন এবং এগুলোর পেছনে থাকা ধারণাগুলোকে চিন্তা করুন।
  • চিন্তাগুলোকে বিশ্লেষণ করে দেখুন এগুলো কতটুকু বাস্তবসম্মত এবং কতটুকু কল্পনাপ্রসূত।
  • নেগেটিভ চিন্তাগুলিকে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত চিন্তায় পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি কখনও সফল হতে পারবো না” চিন্তাকে পরিবর্তন করে বলুন “আমি চেষ্টার মাধ্যমে সফল হতে পারি।”

2. মাইন্ডফুলনেস (Mindfulness):

কীভাবে করবেন:

  • বর্তমানে যা ঘটছে তার প্রতি মনোযোগ দিন এবং আপনার চিন্তাগুলির প্রতি সচেতন থাকুন।
  • যখনই বাজে চিন্তা আসে, তখন সেগুলিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে মনোযোগ বর্তমানের উপর ফিরিয়ে আনুন।
  • দৈনন্দিন জীবনে ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করে নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে পারেন।

3. বিহেভিয়ারাল অ্যাক্টিভেশন (Behavioral Activation):

কীভাবে করবেন:

  • নেতিবাচক চিন্তা এড়াতে নিজেকে নতুন কোনো কাজ বা অ্যাক্টিভিটিতে ব্যস্ত রাখুন।
  • যেসব কার্যকলাপ আপনার আনন্দ দেয় বা মনোযোগ ধরে রাখে, সেগুলোতে যুক্ত হন।
  • প্রিয় কাজ করা যেমন বই পড়া, গান শোনা বা হালকা ব্যায়াম করা আপনার মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

4. ট্রিগার আইডেন্টিফিকেশন (Trigger Identification):

কীভাবে করবেন:

  • কোন ঘটনা, ব্যক্তি বা পরিস্থিতি আপনাকে নেতিবাচক চিন্তার দিকে নিয়ে যায়, তা চিনহিত করুন।
  • এই ট্রিগারগুলির সাথে মোকাবিলা করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা তৈরি করুন।
  • যেমন, যদি কোন বিশেষ ব্যক্তি বা পরিবেশ আপনাকে বাজে চিন্তায় নিয়ে যায়, তাহলে ওই স্থান বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলুন অথবা অন্য কোন কৌশল অনুসরণ করুন।

5. ধ্যান এবং শ্বাসের ব্যায়াম (Meditation and Breathing Exercises):

কীভাবে করবেন:

  • নিয়মিত ধ্যান করুন যাতে আপনার মন শান্ত থাকে এবং বাজে চিন্তা দূর হয়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার মনকে স্থির রাখতে পারেন এবং নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে দূরে সরাতে পারেন।
  • উদাহরণস্বরূপ, ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং মনের সকল চিন্তাকে পরিষ্কার করতে চেষ্টা করুন।

6. সোশ্যাল সাপোর্ট (Social Support):

কীভাবে করবেন:

  • আপনার পরিবার, বন্ধু বা সহকর্মীদের সাথে আপনার চিন্তা এবং অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন।
  • তারা আপনাকে মানসিক সমর্থন এবং প্রেরণা দিতে পারে যা আপনার নেতিবাচক চিন্তা দূর করতে সাহায্য করবে।

উপসংহার

বারবার বাজে চিন্তা আসা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, তবে সঠিক কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) টেকনিক ব্যবহার করে এটি কমানো সম্ভব। উপরোক্ত টেকনিকগুলো প্রয়োগ করে আপনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে এবং নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হতে পারেন। তবে, যদি এই টেকনিকগুলো পর্যাপ্ত না হয় বা সমস্যাটি গুরুতর হয়, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top