বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয়: প্রতিরোধ ও সমাধান

কৃমি সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এটি মূলত অপরিষ্কার পরিবেশ এবং খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। কৃমি পেটে বাসা বেঁধে খাবারের পুষ্টি শোষণ করে এবং এতে বাচ্চার ওজন কমে যেতে পারে, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ও খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে।

কৃমির লক্ষণসমূহ

  • খাওয়ার পরও বাচ্চার ওজন কমে যাওয়া
  • পেট ব্যথা এবং পেট ফাঁপা
  • খাওয়ার প্রতি অনীহা
  • চুলকানি, বিশেষ করে মলদ্বারে
  • বমি বমি ভাব এবং কখনও বমি হওয়া
  • শরীরে দুর্বলতা
  • ঘুমের সমস্যা
  • ক্ষুধামান্দ্য বা অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধা

raju akon youtube channel subscribtion

বাচ্চাদের অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয়

১. কৃমির ওষুধ সেবন

কৃমি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৃমির ওষুধ পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাকে কৃমির ওষুধ দিতে হবে। সাধারণত বছরে দুইবার কৃমির ওষুধ দেওয়া উচিত, বিশেষ করে বয়স ২ বছর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন শুরু করা যেতে পারে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন

বাচ্চার খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে এবং বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৩. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন

বাচ্চাকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত হাত ধোয়া, নখ কাটা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া বাচ্চার মলত্যাগের পর ভালোভাবে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৪. বিছানা ও কাপড় পরিষ্কার রাখুন

বাচ্চার বিছানা, বালিশ, এবং কাপড় নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা বিছানা ও কাপড় কৃমির ডিম সংক্রমণ করতে পারে, যা থেকে বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। নিয়মিত গরম পানিতে কাপড় ধোয়া এ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

৫. নখ ছোট রাখা

বাচ্চাদের নখ ছোট রাখতে হবে, কারণ বড় নখে ময়লা জমে কৃমির ডিম লুকিয়ে থাকতে পারে। বাচ্চা নখ কামড়ালে বা মুখে হাত দিলে কৃমির ডিম পেটে প্রবেশ করতে পারে। তাই নিয়মিত নখ কেটে পরিস্কার রাখা প্রয়োজন।

৬. পরিষ্কার পানি পান করা

বাচ্চাকে সবসময় বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি পান করাতে হবে। অনিরাপদ পানি পান করলে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। পানির ফিল্টার ব্যবহার করা বা ফুটিয়ে পানি খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।

৭. বাইরের ময়লা খাবার এড়িয়ে চলা

বাচ্চাদের জন্য বাইরের ময়লা ও খোলা খাবার অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ সেগুলোতে কৃমির ডিম লুকিয়ে থাকতে পারে। রাস্তার ধারের খাবার, যেমন ফুচকা, চটপটি, কিংবা খোলা ফলমূল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

কৃমি প্রতিরোধে ঘরোয়া সমাধান

১. রসুন

রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক গুণ রয়েছে, যা কৃমি দূর করতে সহায়ক। কাঁচা রসুন খাওয়ানো বা খাবারের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে।

২. পেঁপে

পেঁপেতে রয়েছে প্যাপাইন নামক একটি এনজাইম, যা কৃমির ডিম ও লার্ভা ধ্বংস করতে সহায়ক। পাকা বা কাঁচা পেঁপে খাওয়ানো বা পেঁপের রস পান করানো যেতে পারে।

৩. মেথি বীজ

মেথি বীজ কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি সকালে খালি পেটে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে।

৪. নারকেল তেল

নারকেল তেলে থাকা অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক উপাদান কৃমি দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে বাচ্চাকে ১ চামচ নারকেল তেল খাওয়ানো যেতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি ঘরোয়া প্রতিকার কাজ না করে বা বাচ্চার কৃমি সংক্রমণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তার কৃমির সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ নির্ধারণ করবেন।

উপসংহার

বাচ্চাদের কৃমি সংক্রমণ হলে তা দ্রুত সমাধান করা জরুরি, কারণ এটি তাদের শারীরিক বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং সময়মতো কৃমির ওষুধ সেবন বাচ্চাদের কৃমি সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top