বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার কী? Counselling Psycholoist Raju Akon

বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, যা সাধারণত বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত, একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা ব্যক্তির মুড বা মানসিক অবস্থার অত্যন্ত পরিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত হয়। এই অবস্থায় মুডের দুইটি প্রধান পর্যায় দেখা যায়: ম্যানিয়া (অত্যন্ত উৎফুল্ল বা অতি উদ্দীপনা) এবং ডিপ্রেশন (অত্যন্ত হতাশা বা বিষণ্নতা)।

বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের লক্ষণ:

  1. ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়ার লক্ষণ:
    • অত্যন্ত আনন্দিত, উৎফুল্ল বা উচ্ছ্বসিত অনুভব করা।
    • অস্বাভাবিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া।
    • খুব কম ঘুমিয়ে অনেক বেশি জাগ্রত থাকা।
    • দ্রুত কথা বলা এবং নতুন নতুন আইডিয়া আসা।
    • সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্বাভাবিকতা, যেমন: অপ্রয়োজনীয় বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা।
    • অতি আত্মবিশ্বাস বা বাস্তবতাবর্জিত উচ্চ ধারণা।

      raju akon youtube channel subscribtion

  2. ডিপ্রেশনের লক্ষণ:
    • অত্যন্ত দুঃখ বা বিষণ্নতা অনুভব করা।
    • আগ্রহ বা আনন্দ হারানো, এমনকি যে কাজগুলো আগে ভালো লাগতো।
    • ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা।
    • ঘুমের সমস্যাগুলো, যেমন: অতিরিক্ত ঘুমানো বা খুব কম ঘুমানো।
    • নিজের সম্পর্কে খারাপ ধারণা বা অপরাধবোধ।
    • মনোযোগ দিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া।
    • আত্মহত্যার চিন্তা বা প্রয়াস।

বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের প্রকারভেদ:

  1. বাইপোলার I ডিসঅর্ডার: ম্যানিয়া ও ডিপ্রেশনের মাঝে চরম মুডের পরিবর্তন ঘটে। ম্যানিক এপিসোড সাধারণত এক সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়।
  2. বাইপোলার II ডিসঅর্ডার: হাইপোম্যানিয়া ও ডিপ্রেশনের এপিসোড দেখা যায়, কিন্তু ম্যানিক এপিসোড থাকে না। হাইপোম্যানিয়া হলো ম্যানিয়ার তুলনায় কম চরম।
  3. সাইক্লোথাইমিক ডিসঅর্ডার: কম তীব্রতর হাইপোম্যানিক ও ডিপ্রেসিভ লক্ষণ থাকে যা দুই বছরের বেশি স্থায়ী হয়, কিন্তু পুরোপুরি ম্যানিয়া বা মেজর ডিপ্রেশন হয় না।

কারণ:

বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের নির্দিষ্ট কারণ পুরোপুরি জানা যায় না, তবে এটি সাধারণত জেনেটিক, বায়োলজিক্যাল এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকলে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্রেনের রাসায়নিক ভারসাম্যের পরিবর্তনও এটি সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসা:

বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন:

  1. ঔষধ: মুড স্ট্যাবিলাইজার, অ্যান্টিসাইকোটিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট।
  2. থেরাপি: কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি।
  3. লাইফস্টাইল পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ঘুম।
  4. সমর্থন: পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন, সাপোর্ট গ্রুপ।

সঠিক চিকিৎসা ও সমর্থনের মাধ্যমে, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তিরা সুস্থ ও পূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top