স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ হিসেবে পুরুষাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো অংশের মতো পুরুষাঙ্গও নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক পুরুষ এই বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় সংক্রমণ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার শিকার হন। সঠিক নিয়মে পেনিস ক্লিনিং শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বজায় রাখে না, বরং যৌন স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।
কেন পেনিস ক্লিনিং জরুরি?
১. সংক্রমণ প্রতিরোধ: পেনিসের চারপাশে ঘাম, তেল, এবং ময়লা জমে গেলে তা সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের কারণে চামড়ার বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ইরিটেশন, ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
২. ফোরস্কিনের নিচে ময়লা জমা: যাদের ফোরস্কিন আছে (অর্থাৎ খতনা করা হয়নি), তাদের জন্য এই অংশটি পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। ফোরস্কিনের নিচে সেমেন, ঘাম, ময়লা জমতে পারে, যা প্রয়োজনে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. দুর্গন্ধের সমস্যা: পেনিস সঠিকভাবে পরিষ্কার না রাখলে দুর্গন্ধের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- জ্বালা ও চুলকানি: পরিষ্কার না রাখার ফলে চুলকানি ও অস্বস্তি হতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।
পেনিস পরিষ্কার করার সঠিক উপায়
১. প্রতিদিন পরিষ্কার করা
প্রতিদিন স্নানের সময় পেনিস পরিষ্কার করা উচিত। নরম সাবান এবং গরম পানি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে পেনিস পরিষ্কার করুন। যদি ফোরস্কিন থাকে, তাহলে ফোরস্কিন টেনে তুলে তার নিচের অংশও পরিষ্কার করুন।
২. সাবধানতার সঙ্গে শুকিয়ে নিন
পেনিস পরিষ্কার করার পর তা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। ভেজা অবস্থায় থাকলে ফাঙ্গাস এবং অন্যান্য সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন।
৩. ঘনিষ্ঠ কাপড় পরিষ্কার রাখুন
যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ পোশাকেরও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত। নিয়মিত পরিষ্কার আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করুন এবং এমন কাপড় পরিধান করুন যা আপনার ত্বকের জন্য আরামদায়ক এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের উপযোগী।
৪. কনডম ব্যবহার করা
যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করলে যৌনবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখা সহজ হয়। কনডম ব্যবহারের পর পেনিস ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
পেনিস পরিষ্কার না রাখলে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে
১. ব্যালানাইটিস: পেনিসের অগ্রভাগে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ হলে এর ফলে ফোলাভাব, লালচে হওয়া, জ্বালা, এবং ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এটি সাধারণত অপরিচ্ছন্নতা ও সঠিকভাবে পেনিস পরিষ্কার না করার ফলে হয়।
২. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI): পেনিস পরিষ্কার না রাখলে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে, যার ফলে UTI হতে পারে। এই সংক্রমণ অনেক কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
৩. ফিমোসিস: এটি একটি অবস্থা যেখানে ফোরস্কিনের নিচের অংশ পরিষ্কার না করার ফলে তা শক্ত হয়ে যায় এবং ফোরস্কিন টেনে তুলতে অসুবিধা হয়। এই সমস্যার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
৪. পেনিস ক্যান্সার: দীর্ঘমেয়াদে পেনিসের পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে পেনিস ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদিও এটি বিরল, তবে এটি একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি।
পেনিস পরিষ্কার রাখা সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
১. খুব বেশি সাবান ব্যবহার করা: অনেকে মনে করেন, বেশি সাবান বা হরহামেশা পরিষ্কার করলে যৌনাঙ্গ সুস্থ থাকে। কিন্তু খুব বেশি সাবান ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং প্রাকৃতিক তেলের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই নরম সাবান ব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত স্ক্রাবিং এড়িয়ে চলা উচিত।
২. কেবলমাত্র পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যথেষ্ট নয়: অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র পানি দিয়ে পেনিস পরিষ্কার করলে যথেষ্ট। তবে নরম সাবান এবং পানি একসঙ্গে ব্যবহার করা সবচেয়ে উপযুক্ত।
উপসংহার
পুরুষাঙ্গের পরিষ্কার রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র যৌনস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে আরাম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করতে সহায়ক। নিয়মিত পেনিস পরিষ্কার করলে এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে অনেক শারীরিক সমস্যা এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬