পাইলস বা হেমোরয়েড হলো একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মলদ্বারের চারপাশের শিরাগুলোতে অতিরিক্ত চাপের কারণে সেগুলো ফুলে যায় বা প্রদাহ হয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুবই বেদনাদায়ক এবং অস্বস্তিকর হতে পারে। যদিও পাইলস দীর্ঘস্থায়ী রোগ নয়, এটি সময়মতো চিকিৎসা না করলে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে পাইলস পুরোপুরি ভালো করা সম্ভব।
পাইলসের কারণ
১. কোষ্ঠকাঠিন্য: পাইলসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া পায়ের শিরাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা পাইলসের জন্ম দেয়।
২. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার সময় মহিলাদের মধ্যে পাইলসের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ এই সময়ে পেটের শিরাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
৩. অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন শরীরের বিভিন্ন অংশে শিরাগুলোর ওপর চাপ ফেলে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
৪. দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা: যারা দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করেন বা অনেকক্ষণ বসে থাকেন তাদের পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
৫. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস: আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি না পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হয়, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
পাইলসের লক্ষণ
- মলত্যাগের সময় রক্তপাত: মলত্যাগের সময় লাল রঙের রক্ত দেখা গেলে এটি পাইলসের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি: মলত্যাগের সময় বা পরেও মলদ্বারে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি বা ফোলা: পাইলসের ফলে মলদ্বারের চারপাশে ফোলা এবং চুলকানি দেখা দিতে পারে।
- মলদ্বারে গুটির মতো অনুভূত হওয়া: বাহ্যিক পাইলসের ক্ষেত্রে মলদ্বারের বাইরে গুটির মতো ফুলে ওঠা দেখা যায়।
পাইলস কি ভালো হয়?
হ্যাঁ, পাইলস ভালো করা সম্ভব, তবে এটি নির্ভর করে রোগের পর্যায় ও চিকিৎসার ধরনের ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনধারা পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনে পাইলস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। তবে, জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গেলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
পাইলসের চিকিৎসা
১. জীবনধারা পরিবর্তন
- আঁশযুক্ত খাবার: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল এবং পুরো শস্য যুক্ত করুন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- প্রচুর পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম থাকবে এবং মলত্যাগ সহজ হবে।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করলে অন্ত্রের গতি বৃদ্ধি পায়, যা পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক।
- দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়ানো: দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার সময় মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
২. ঔষধ গ্রহণ
পাইলসের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। এগুলো ব্যথা, ফোলা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. অস্ত্রোপচার (সার্জারি)
যদি পাইলস গুরুতর আকার ধারণ করে এবং ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসায় ভালো না হয়, তবে চিকিৎসকরা সার্জারি করার পরামর্শ দিতে পারেন। সাধারণত লেজার সার্জারি বা পাইলসেকটমি করা হয়।
উপসংহার
পাইলস একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়েই এর লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে গুরুতর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম পাইলস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।