শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা সঠিক রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম একটি প্রয়োজনীয় মিনারেল যা স্নায়ুর কার্যক্রম ও পেশীর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অতিরিক্ত পটাশিয়াম (হাইপারক্যালেমিয়া) শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে কিডনি সমস্যা বা হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য। তাই যদি শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়, তা কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এই ব্লগে পটাশিয়ামের মাত্রা কমানোর উপায় এবং কিছু সাধারণ টিপস আলোচনা করা হয়েছে।
পটাশিয়াম কমানোর উপায়:
১. পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন:
পটাশিয়াম কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থেকে দূরে থাকা। কিছু খাদ্যদ্রব্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- কলা
- আলু
- টমেটো
- কমলা ও কমলার রস
- পালং শাক
- ব্রকলি
- ডাল, শিম, এবং মটর
এসব খাবারের পরিবর্তে কম পটাশিয়ামযুক্ত খাবার বেছে নিন, যেমন:
- আপেল
- বেগুন
- ফুলকপি
- ব্রেড
- চাল ও পাস্তা
২. শাকসবজি সঠিকভাবে রান্না করুন:
শাকসবজি রান্নার মাধ্যমে তাদের পটাশিয়ামের পরিমাণ কমানো যায়। শাকসবজি রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং সিদ্ধ করার আগে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এতে পটাশিয়াম পানিতে চলে যায়। রান্নার পর সেই পানি ফেলে দিয়ে শাকসবজি খান।
৩. অধিক জল পান করুন:
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। জল শরীর থেকে পটাশিয়াম বের করতে সাহায্য করে। তবে যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাদের জল পানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৪. কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন:
কিছু কম সোডিয়ামযুক্ত লবণ পটাশিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ হয়, যা পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পটাশিয়াম মুক্ত লবণ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৫. পটাশিয়াম ব্লকার ওষুধের ব্যবহার:
কিছু ওষুধ পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বিশেষ করে কিডনি রোগী এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য পটাশিয়াম ব্লকার ওষুধ কার্যকর হতে পারে। তবে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা নিয়ন্ত্রণ করুন:
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনিক পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০০০-২৫০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। এজন্য খাদ্যতালিকায় নিয়মিত কম পটাশিয়ামযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন এবং প্রোটিন, ফ্যাট, এবং কার্বোহাইড্রেটের সঠিক মিশ্রণ নিশ্চিত করুন।
পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হলে লক্ষণ:
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি
- হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া
- বমি বমি ভাব
- শ্বাসকষ্ট
- বুকের ব্যথা
- পেশীর সংকোচন
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ হাইপারক্যালেমিয়া প্রাণঘাতী হতে পারে।
উপসংহার:
শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পটাশিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, শাকসবজি সঠিকভাবে রান্না করুন, এবং পর্যাপ্ত জল পান করুন। যদি পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে এবং শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।