নাকের ইনফেকশন হলে করণীয়: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

নাকের ইনফেকশন অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাসের কারণে হতে পারে। এটি নাকের ভেতরের টিস্যুগুলির প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং নানা ধরনের অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। নাকের ইনফেকশন চিকিৎসা না করলে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই নাকের ইনফেকশন হলে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

নাকের ইনফেকশনের কারণ:

১. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ:
নাকের ভেতরের অংশে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামে একটি ব্যাকটেরিয়া নাকের ইনফেকশনের জন্য দায়ী হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ভাইরাল সংক্রমণ:
সর্দি বা ফ্লু-এর কারণে নাকের ইনফেকশন হতে পারে। ঠান্ডা লাগলে ভাইরাস নাকের সাইনাসে সংক্রমণ ঘটিয়ে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।

৩. ফাঙ্গাল সংক্রমণ:
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের মধ্যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে অ্যালার্জি বা সাইনোসাইটিসের রোগীদের মধ্যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশি দেখা যায়।

নাকের ইনফেকশনের লক্ষণ:

  • নাকের ভেতরে ব্যথা বা অস্বস্তি।
  • নাক দিয়ে পুঁজ বা রক্তপাত হওয়া।
  • নাক বন্ধ হয়ে থাকা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • মাথাব্যথা বা চোয়ালে ব্যথা।
  • জ্বর বা শারীরিক দুর্বলতা।
  • গন্ধের ক্ষমতা কমে যাওয়া।

নাকের ইনফেকশন হলে করণীয়:

১. প্রচুর পানি পান করুন:
নাকের ভেতরের মিউকাস বা শ্লেষ্মা পাতলা করতে ও শরীর থেকে টক্সিন বের করে আনতে পানি খাওয়া জরুরি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, গরম চা বা স্যুপ খেতে পারেন।

২. নাকের জন্য স্যালাইন ওয়াশ ব্যবহার করুন:
স্যালাইন স্প্রে বা নেটি পট ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার রাখুন। এটি নাকের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৩. বাষ্প গ্রহণ করুন:
নাকের ইনফেকশন হলে বাষ্প নেওয়া খুবই কার্যকর। বাষ্প নাকের মিউকাস পাতলা করতে সাহায্য করে এবং নাক বন্ধ হলে তা খুলে দিতে পারে। গরম পানিতে নরমাল লবণ মিশিয়ে তার বাষ্প গ্রহণ করতে পারেন।

৪. পেইন রিলিভার ওষুধ নিন:
যদি ইনফেকশনটি ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে, তাহলে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় পেইন রিলিভার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

৫. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
যদি ইনফেকশনটি ব্যাকটেরিয়াজনিত হয় এবং নিজের থেকেই ভালো না হয়, তাহলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নাকের ইনফেকশন দ্রুত ভালো করতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা জরুরি।

৬. অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা:
যদি ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে নাকের সমস্যা হয়, তাহলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে সঠিক ওষুধ নির্ধারণ করবেন।

৭. নাক চুলকানো বা ঘষা এড়িয়ে চলুন:
নাকের ইনফেকশনের সময় নাক চুলকানো বা ঘষা থেকে বিরত থাকুন। এটি সংক্রমণকে আরও বাড়াতে পারে।

৮. অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
যদি অ্যালার্জির কারণে নাকের ইনফেকশন হয়ে থাকে, তাহলে অ্যালার্জি ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। অ্যালার্জির ওষুধও নাকের ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন:

  • যদি ইনফেকশন ৭-১০ দিনের মধ্যে না সারে।
  • তীব্র মাথাব্যথা বা চোয়ালে ব্যথা দেখা দেয়।
  • নাক দিয়ে রক্ত বা পুঁজ বের হতে থাকে।
  • উচ্চ জ্বর বা শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে।
  • শ্বাস নিতে খুব বেশি কষ্ট হয়।

নাকের ইনফেকশন প্রতিরোধে কিছু টিপস:

  • নাক নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
  • ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
  • সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।
  • নাকের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে ধূমপান ও দূষণ এড়িয়ে চলুন।

উপসংহার:

নাকের ইনফেকশন দ্রুত সনাক্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। বাড়িতে কিছু সাধারণ প্রতিকার যেমন স্যালাইন ওয়াশ, বাষ্প গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবহার করে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তার দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top