ডিমেনশিয়া হলো একটি জটিল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মস্তিষ্কের কোষের ধীরে ধীরে ক্ষতির ফলে ঘটে। এই রোগটি সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অল্প বয়সেও দেখা যেতে পারে। ডিমেনশিয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা রোগের ধরণ ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে। নিচে ডিমেনশিয়া রোগের প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. আলঝাইমার রোগ
ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো আলঝাইমার রোগ। এটি একটি প্রগতিশীল রোগ যা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের ক্ষতি করে। আলঝাইমার রোগে মস্তিষ্কের কোষে প্রোটিনের অস্বাভাবিক গঠন এবং প্লাকের জমা ঘটে, যা স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তির অবনতি ঘটায়।
২. ভাসকুলার ডিমেনশিয়া
মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার কারণে ভাসকুলার ডিমেনশিয়া ঘটে। যখন মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেই অংশের কোষগুলি মারা যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়া দেখা দেয়।
৩. লিউই বডি ডিমেনশিয়া
লিউই বডি ডিমেনশিয়া হলো একটি বিশেষ ধরনের ডিমেনশিয়া, যেখানে মস্তিষ্কের কোষে অস্বাভাবিক প্রোটিনের (লিউই বডি) জমা ঘটে। এটি রোগীর মানসিক দক্ষতা, চলাচলের ক্ষমতা এবং আচরণে প্রভাব ফেলে।
৪. ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া
ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া হলো এমন একটি ডিমেনশিয়া যা মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল এবং টেম্পোরাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঘটে। এই ধরনের ডিমেনশিয়া সাধারণত ব্যক্তিত্ব ও আচরণে পরিবর্তন ঘটায় এবং ভাষাগত সমস্যার সৃষ্টি করে।
৫. পারকিনসন রোগ
পারকিনসন রোগের ফলে কিছু রোগী ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। পারকিনসন রোগে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ডোপামিন উৎপাদন কমে যায়, যা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
৬. মস্তিষ্কের আঘাত
গুরুতর মাথার আঘাত মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি ঘটাতে পারে, যা পরবর্তীতে ডিমেনশিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, বারবার আঘাত পেলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
৭. সংক্রমণ এবং রোগ
কিছু সংক্রমণ, যেমন HIV/AIDS, মেনিনজাইটিস, এবং ক্রয়েটজফেল্ট-জ্যাকব রোগ (CJD) ডিমেনশিয়ার কারণ হতে পারে। এই রোগগুলো মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে এবং ডিমেনশিয়ার লক্ষণ সৃষ্টি করে।
৮. মদ্যপান ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার
মদ্যপান বা মাদকদ্রব্যের দীর্ঘমেয়াদি অপব্যবহার মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে, যা ডিমেনশিয়া সৃষ্টি করতে পারে। মদ্যপান বিশেষ করে ভিটামিন B1 এর অভাব ঘটায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
ডিমেনশিয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি বা স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ফলে ঘটে। ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সময়মত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বা আপনার প্রিয়জন এই ধরনের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগস:
#ডিমেনশিয়া #মানসিকস্বাস্থ্য #আলঝাইমার #বাংলা
Raju Akon – Counseling Psychologist
Pinel Mental Health Care Centre,
222/1B, South Pirerbag, Mirpur-2, Dhaka -1216
📞 ফোন: 01681006726