ডালিম, যাকে অনেকে অনার (Pomegranate) নামেও চেনে, এক অসাধারণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং মিনারেল শরীরকে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ডালিম নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই ডালিমের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
ডালিমের পুষ্টিগুণসমূহ
ডালিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ফল। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। ডালিমের প্রতিটি দানাতে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ৮৩ ক্যালোরি (প্রতি ১০০ গ্রাম)
- প্রোটিন: ১.৭ গ্রাম
- ফ্যাট: ১.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১৮.৭ গ্রাম
- ফাইবার: ৪ গ্রাম
- ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের ৩০%
- ভিটামিন কে: দৈনিক প্রয়োজনের ৩৬%
- ফোলেট: দৈনিক প্রয়োজনের ১৬%
- পটাসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ১২%
ডালিমের ১০টি প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
ডালিমে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পিউনিকালাগিন রক্তনালী পরিষ্কার রাখতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি হার্টের ধমনীতে চর্বি জমা হতে বাধা দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
ডালিম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী। এর ফাইবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
ডালিমের মধ্যে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধে সহায়ক। এটি স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
ডালিম ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের কোষকে পুনরুদ্ধার করে এবং ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল রাখে। ডালিম ত্বকের কালো দাগ ও ব্রণের সমস্যা কমায়।
৫. হজমের উন্নতি করে
ডালিমে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং পেটের নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
৬. রক্তস্বল্পতা দূর করে
ডালিম আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডালিম খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে।
৭. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ডালিমে থাকা পলিফেনল মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এটি বৃদ্ধ বয়সে আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ডালিমে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এটি খেলে ক্ষুধার অনুভূতি কমায় এবং বেশি সময় পেট ভরা থাকে।
৯. প্রদাহ কমায়
ডালিম প্রদাহনাশক উপাদানে সমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ কমাতে সহায়ক।
১০. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
ডালিমে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি ঠান্ডা, সর্দি, এবং অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ডালিম খাওয়ার কিছু বাড়তি উপকারিতা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ডালিম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
- চুলের যত্ন: ডালিমের রস চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
- হাড় মজবুত করে: ডালিম হাড়ের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।
উপসংহার
ডালিম একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিকর ফল, যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক। নিয়মিত ডালিম খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করা থেকে শুরু করে ত্বক ও চুলের যত্ন পর্যন্ত অসংখ্য উপকারিতায় ভরপুর। তাই, সুস্থ জীবনের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় ডালিম অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.