ডাউন সিনড্রোম: কারণ ও লক্ষণ

ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক বা ক্রোমোজোমজনিত অবস্থা, যা সাধারণত শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। এটি মানুষের ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি থাকার কারণে ঘটে। ডাউন সিনড্রোমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা, যা জন্মের পরেই প্রকাশ পেতে শুরু করে।

ডাউন সিনড্রোমের কারণ:

ডাউন সিনড্রোমের প্রধান কারণ হল ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের ত্রিসমি (Trisomy 21)। সাধারণত মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে (মোট ৪৬টি), যার অর্ধেক পিতা এবং অর্ধেক মাতা থেকে আসে। তবে ডাউন সিনড্রোমে, ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি থাকে, যার ফলে মোট ৪৭টি ক্রোমোজোম তৈরি হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

১. ত্রিসমি ২১ (Trisomy 21):

প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোমের কারণ হয় ত্রিসমি ২১। এই অবস্থায় ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি উপস্থিত থাকে, যা সেল বিভাজনের সময় ভুলক্রমে ঘটে।

২. ট্রান্সলোকেশন (Translocation):

প্রায় ৪% ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোম ট্রান্সলোকেশন নামে পরিচিত একটি জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এখানে ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অংশ অন্য ক্রোমোজোমের সাথে লেগে থাকে।

৩. মোজাইসিজম (Mosaicism):

১% ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোম মোজাইসিজমের মাধ্যমে ঘটে, যেখানে কিছু কোষে স্বাভাবিক ক্রোমোজোম সংখ্যা (৪৬) থাকে, এবং অন্য কোষগুলোতে ৪৭টি ক্রোমোজোম থাকে।

ডাউন সিনড্রোমের লক্ষণ:

ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা শারীরিক, মানসিক ও বিকাশগত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। লক্ষণগুলি একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে।

১. শারীরিক লক্ষণ:
  • মুখাবয়বে বিশেষ বৈশিষ্ট্য (ফ্ল্যাট মুখাবয়ব, ছোট কান, ছোট নাক)
  • চোখের কোণগুলো উপরের দিকে উঁচু থাকে
  • ছোট হাত ও পা, এবং হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা দেখা যেতে পারে
  • ঘাড়ে বাড়তি চামড়া বা ঢিলা ত্বক
  • পেশীগুলোর দুর্বলতা বা ঢিলেঢালা ভাব (হাইপোটোনিয়া)
  • ছোট আকারের মুখ এবং জিহ্বার আকার তুলনামূলক বড় হওয়ায় জিহ্বা অনেক সময় মুখের বাইরে বেরিয়ে থাকে
২. বুদ্ধিবৃত্তিক ও বিকাশগত সীমাবদ্ধতা:
  • মানসিক বিকাশে ধীরগতি, এবং কিছু ক্ষেত্রে সীমিত বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা
  • ভাষাগত সমস্যা এবং বাকশক্তির দুর্বলতা
  • মনোযোগ ও শিখন ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা
  • অন্যদের তুলনায় পড়াশোনা বা দৈনন্দিন কাজ শেখার ক্ষেত্রে দেরি হওয়া
৩. স্বাস্থ্যগত জটিলতা:
  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা (Congenital heart defects)
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং ঘন ঘন ঠাণ্ডা বা ফুসফুসের সংক্রমণ
  • হজমের সমস্যা (gastrointestinal defects)
  • হাড়ের বৃদ্ধি এবং পেশীগত সমস্যার কারণে আঙ্গুল বা পায়ের আঙ্গুলে পরিবর্তন

ডাউন সিনড্রোম নির্ণয়:

ডাউন সিনড্রোম গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পরে নির্ণয় করা যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় আলট্রাসাউন্ড বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই অবস্থার উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও, জন্মের পরে শিশুর শারীরিক লক্ষণ ও জেনেটিক পরীক্ষা করিয়ে ডাউন সিনড্রোম নিশ্চিত করা হয়।

উপসংহার:

ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক অবস্থা, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। যদিও এর নির্দিষ্ট কারণ জেনেটিক ত্রুটি, তবে প্রারম্ভিক নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই অবস্থায় আক্রান্ত শিশুর উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক সমর্থন এবং শিক্ষামূলক থেরাপি এই শিশুদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top