চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ: কারণ ও করণীয়

চোখে ছানি পড়া বা ক্যাটারাক্ট হল একটি সাধারণ চোখের সমস্যা, যা বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে বেশি দেখা যায়। এই সমস্যায় চোখের লেন্স ধীরে ধীরে অস্বচ্ছ হয়ে যায়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং স্পষ্টভাবে দেখতে অসুবিধা হয়। যদি সময়মতো এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি দৃষ্টিহীনতা পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই ব্লগে চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ, কারণ এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

চোখে ছানি পড়ার লক্ষণসমূহ:

১. দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া:
ছানির প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হলো দৃষ্টির ঝাপসা হয়ে যাওয়া। দূরত্বে কোনো জিনিস স্পষ্ট দেখা যায় না এবং পড়ার সময়ও ঝাপসা অনুভূত হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. দুই চোখে দ্বিগুণ দেখা:
এক চোখ দিয়ে জিনিসগুলো দ্বিগুণ দেখা যায়, যা ছানি পড়ার অন্যতম লক্ষণ। এই অবস্থায় এক চোখ বন্ধ করলে দৃষ্টির সমস্যা কমে, কিন্তু অন্য চোখে সমস্যা থেকে যায়।

৩. আলোতে সমস্যা:
ছানি পড়ার ফলে চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা কমে যায়, যার কারণে আলোতে সমস্যা হয়। উজ্জ্বল আলো বা সূর্যের আলোতে চোখ কষ্ট পায় এবং আলো ঘোলাটে দেখা যায়।

৪. রঙের মলিনতা:
ছানি পড়ার কারণে রঙের উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং সবকিছু ধূসর বা ফ্যাকাসে দেখা যায়। বিশেষ করে উজ্জ্বল রঙগুলো ফিকে দেখায়।

৫. রাতের দৃষ্টি কমে যাওয়া:
রাতের বেলা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। রাতে গাড়ি চালানোর সময় ঝাপসা দেখা যায় এবং আলোর ঝলকানি চোখে কষ্ট দেয়।

৬. চশমার পাওয়ার পরিবর্তন:
ছানির কারণে চশমার পাওয়ার বারবার পরিবর্তন করতে হয়, তবুও দৃষ্টিশক্তি স্পষ্ট হয় না। এই পরিবর্তন ছানির অগ্রগতি নির্দেশ করে।

চোখে ছানি পড়ার কারণ:

১. বৃদ্ধ বয়স:
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চোখের লেন্স স্বচ্ছতা হারায়, যার ফলে ছানি পড়ে। সাধারণত ৬০ বছরের পর থেকে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

২. আঘাত বা ইনজুরি:
চোখে আঘাত লাগলে বা চোখের কোনো দুর্ঘটনা হলে লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট হতে পারে এবং ছানি পড়তে পারে।

৩. ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছানি পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। উচ্চ রক্তশর্করার কারণে চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা কমে যায়।

৪. উচ্চ রক্তচাপ ও ওষুধ:
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বা স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে ছানি পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. বংশগত কারণ:
অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ছানি পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। যদি পরিবারের কোনো সদস্যের এই সমস্যা থাকে, তবে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চোখে ছানি পড়ার চিকিৎসা:

১. চশমা ও কন্টাক্ট লেন্স:
ছানি পড়ার প্রথম পর্যায়ে চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা যেতে পারে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।

২. সার্জারি (অপারেশন):
ছানির চূড়ান্ত চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। সার্জারির মাধ্যমে চোখের অস্বচ্ছ লেন্স সরিয়ে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়, যা দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনে। এটি একটি নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই সফলতা দেখা যায়।

ছানি পড়া প্রতিরোধের উপায়:

১. সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষা করুন:
সূর্যের UV রশ্মি চোখের ক্ষতি করতে পারে। তাই বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন, যা UV রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করবে।

২. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন:
ভিটামিন C, E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খেলে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান ও মদ্যপান চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট করতে পারে, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন।

৪. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করুন:
৪০ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা উচিত, যাতে ছানির প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।

উপসংহার:

চোখে ছানি পড়া একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর চোখের সমস্যা। প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসা করালে দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা সম্ভব। তবে নিয়মিত চোখের যত্ন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমানো যায়। যদি ছানি পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top