গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়: উপকারিতা ও ঝুঁকি

গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা পরিবর্তন হয়, যা শারীরিক ক্লান্তি ও ঘুমের প্রয়োজন বাড়িয়ে তোলে। তবে প্রশ্ন হলো, গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি কোনো ঝুঁকি রয়েছে? গর্ভবতী নারীর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা দরকার। এই ব্লগে গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমের উপকারিতা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমের উপকারিতা:

১. শারীরিক ক্লান্তি কমায়:
গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ক্লান্তি বাড়ে। বেশি ঘুম শরীরকে বিশ্রাম দেয়, যা ক্লান্তি কমাতে সহায়ক।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মনের প্রশান্তি আনে:
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে। বেশি ঘুম মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সহায়তা করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

৩. শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়ক:
পর্যাপ্ত ঘুম গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে শিশুর মস্তিষ্ক এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়, যা ঘুমের মাধ্যমে সহজ হয়।

৪. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে:
গর্ভাবস্থায় ঘুম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) বৃদ্ধি করে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে এবং মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকে।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমের ঝুঁকি:

১. ওজন বৃদ্ধি:
অতিরিক্ত ঘুম শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়, যার ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত ওজন গর্ভকালীন জটিলতা বাড়াতে পারে।

২. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি:
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

৩. রক্তচাপের সমস্যা:
অতিরিক্ত ঘুম রক্তচাপের ওঠানামা করতে পারে। এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়া নামক একটি জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়, যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক হতে পারে।

৪. মাথা ব্যথা ও অবসন্নতা:
বেশি ঘুমানোর ফলে কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে শরীরে রক্তসঞ্চালন কমে, যা অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কতক্ষণ ঘুমানো উচিত?

সাধারণত গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে একেকজনের ঘুমের প্রয়োজন ভিন্ন হতে পারে। প্রথম ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে বেশি ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, তাই এই সময়ে একটু বেশি ঘুমানো স্বাভাবিক।

ঘুমের গুণমান বাড়ানোর টিপস:

১. সঠিক শোয়ার ভঙ্গি অনুসরণ করুন:
গর্ভাবস্থায় বাম পাশ করে শোয়া উত্তম, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শিশু ও মায়ের জন্য নিরাপদ।

২. হালকা ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয় এবং শরীরকে সজীব রাখতে সহায়ক হয়।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন, তবে রাতে কম খান:
সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, তবে রাতে অতিরিক্ত পানি পান করলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

৪. স্ট্রেস কমান:
মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, এবং মনোরম কাজ করুন। স্ট্রেস কমালে ঘুমের গুণমান বাড়ে।

উপসংহার:

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম মায়ের এবং শিশুর জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত ঘুম শরীরের কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক পরিমাণে ঘুমানো উচিত এবং শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখা জরুরি। যদি অতিরিক্ত ঘুমের কারণে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top