খিঁচুনি (Seizure) হলো মস্তিষ্কের স্নায়ুর অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের ফলে হওয়া অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। এটি সাধারণত মস্তিষ্কে একটি বৈদ্যুতিক অস্থিরতার কারণে ঘটে, যার ফলে শরীরের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। খিঁচুনি যেকোনো বয়সের ব্যক্তির হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণে উদ্ভাসিত হতে পারে।
খিঁচুনির কারণ:
খিঁচুনি অনেক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- মৃগী রোগ (Epilepsy): মৃগী রোগের প্রধান লক্ষণ হলো খিঁচুনি। এটি মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী একটি অবস্থা যা নিয়মিত খিঁচুনির কারণ হয়ে থাকে।
- মস্তিষ্কের আঘাত: মাথায় কোনো ধাক্কা বা আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হলে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
- ইনফেকশন: মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো মস্তিষ্কের সংক্রমণ খিঁচুনির কারণ হতে পারে।
- জ্বরজনিত খিঁচুনি: শিশুদের মাঝে জ্বরের ফলে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে, যাকে “ফেব্রাইল খিঁচুনি” বলা হয়।
- মাদকাসক্তি বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া: মাদকাসক্তি, মদ্যপান বা নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও খিঁচুনি হতে পারে।
- মস্তিষ্কে টিউমার: মস্তিষ্কে কোনো টিউমার বা নিউরোলজিক্যাল অস্বাভাবিকতা খিঁচুনির কারণ হতে পারে।
খিঁচুনির লক্ষণ:
খিঁচুনির লক্ষণ ব্যক্তির অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো:
- শরীরের অনিয়ন্ত্রিত ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি।
- একদম স্থির হয়ে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে পড়া।
- চোখের পাতা বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের টান টান হয়ে যাওয়া।
- অজ্ঞান হওয়ার পর কথা বা কিছু মনে করতে অসুবিধা।
- আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন বা বিভ্রান্তি।
খিঁচুনির প্রতিকার:
খিঁচুনি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে, তবে এটি খিঁচুনির প্রকৃতি এবং কারণের উপর নির্ভর করে।
- ওষুধ: মৃগী রোগের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে যা নিয়মিত খেলে খিঁচুনির প্রবণতা কমানো যায়।
- প্রতিক্রিয়ামূলক যত্ন: খিঁচুনি হলে ব্যক্তি যাতে আঘাত না পায় সেজন্য তাকে নরম কিছুতে শোয়ানো উচিত এবং নড়াচড়া থেকে রক্ষা করা উচিত।
- লাইফস্টাইল পরিবর্তন: খিঁচুনির ঝুঁকি কমাতে মাদকাসক্তি, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত খাবার খাওয়া এবং চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ।
- মেডিকেল থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ডাক্তাররা থেরাপি বা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিতে পারেন।
খিঁচুনির সময় করণীয়:
খিঁচুনি হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি:
- খিঁচুনি হলে ব্যক্তির চারপাশে বিপদজনক কোনো বস্তু থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন।
- ব্যক্তিকে পাশে ঘুরিয়ে দিন যাতে তার নিশ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
- কোনো কিছু জোর করে মুখে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
- খিঁচুনি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়লে চিকিৎসা সহায়তা নিন।
উপসংহার:
খিঁচুনি এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে এর প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা এবং সচেতনতা এই অবস্থার উন্নতি করতে পারে। খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।