গর্ভাবস্থা একটি নারীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মায়ের শরীরের প্রতিটি পদক্ষেপই শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার এবং অভ্যাস গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, এমনকি গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। এই ধরনের খাবার ও অভ্যাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত, যাতে আপনি গর্ভাবস্থায় নিজের এবং শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কি ধরনের খাবার এবং অভ্যাস গর্ভপাত ঘটাতে পারে এবং এ সময় কিভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
কি খেলে পেটের বাচ্চা নষ্ট হতে পারে?
১. পেঁপে:
কাঁচা বা আধপাকা পেঁপেতে প্যাপাইন নামক উপাদান থাকে, যা প্রায়শই গর্ভপাত ঘটানোর জন্য দায়ী। পেঁপের বীজে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন থাকে, যা গর্ভাশয়ের সংকোচন বাড়াতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
২. আনারস:
আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামে একটি এনজাইম গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভাশয়ের সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। আনারসের অতিরিক্ত সেবন গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে।
৩. আলকোহল:
গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ করা শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অ্যালকোহল গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং ফিটাল অ্যালকোহল সিন্ড্রোম সৃষ্টি করতে পারে। এটি গর্ভপাত এবং জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ক্যাফেইন:
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। দিনে ২০০ মিগ্রা ক্যাফেইনের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কফি, চা, সফট ড্রিঙ্ক এবং চকোলেট ক্যাফেইনের উৎস, তাই এগুলোর সেবন সীমিত করতে হবে।
৫. আধপাকা বা কাঁচা মাংস:
আধপাকা বা কাঁচা মাংস খেলে লিস্টেরিয়া বা স্যালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই সম্পূর্ণ রান্না করা মাংস খাওয়া উচিত।
৬. কাঁচা ডিম:
কাঁচা ডিমে থাকা স্যালমোনেলা সংক্রমণ গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং গর্ভপাত ঘটানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই ডিম অবশ্যই সম্পূর্ণ সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া উচিত।
৭. জংক ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার:
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, অতিরিক্ত প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। এসব খাবার গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার:
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। লিভারের খাবার এবং কিছু সাপ্লিমেন্টে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ থাকে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
গর্ভপাতের ঝুঁকি কমানোর জন্য করণীয়:
১. সুস্থ এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ:
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। শাকসবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য, প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এতে গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত হবে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি কমবে।
২. ভেজাল মুক্ত খাবার গ্রহণ:
ভেজালযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন এবং পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন। রাসায়নিক এবং প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ:
কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। গর্ভাবস্থায় অনেক ওষুধ ক্ষতিকর হতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ:
গর্ভাবস্থায় স্ট্রেস কমিয়ে রাখতে হবে। বেশি স্ট্রেস শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ:
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করুন। এতে গর্ভাবস্থায় কোনো ঝুঁকি থাকলে তা সময়মতো শনাক্ত করা যাবে।
উপসংহার:
গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য এবং খাবারের অভ্যাস সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে। কিছু খাবার এবং অভ্যাস শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো ধরনের অসুবিধা বা জটিলতা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।