কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে এবং শরীরে জল ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিডনির সঠিক কার্যকারিতা না থাকলে শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে, যেমন কিডনি ফেইলুর, কিডনি স্টোন বা কিডনি সংক্রমণ। তাই কিডনিকে সুস্থ রাখতে কিছু অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি শরীরে জমে থাকা টক্সিনগুলো দূর করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
২. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিডনি ভালো রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে। পটাশিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত খাবার বেশি খেলে কিডনির উপর চাপ পড়তে পারে। তাই পরিমিত সবুজ শাকসবজি, তাজা ফলমূল, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। তবে অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কিডনির সুস্থতায় সহায়তা করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে শরীরের সমস্ত অঙ্গের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চ রক্তচাপ কিডনির জন্য একটি বড় ঝুঁকি। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। লবণ কম খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
স্থূলতা কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং কিডনি সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমে।
৬. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপান ও মদ্যপান কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৭. ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত ব্যথানাশক বা অন্যান্য ওষুধ সেবন কিডনির ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ খেলে কিডনি ফেইলুরের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা জরুরি। উচ্চ রক্তে শর্করা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। সঠিক ডায়েট, ওষুধ ও নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
৯. প্রস্রাব চেপে রাখা এড়িয়ে চলুন
দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি কিডনি সংক্রমণ বা কিডনি স্টোনের কারণ হতে পারে।
১০. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান
নিয়মিত কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে কিডনি সমস্যা আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়। রক্ত ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা যাচাই করা যায়।
কিডনি সমস্যা হলে কী করবেন?
কিডনি সমস্যার কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:
- পায়ে বা মুখে ফোলাভাব
- প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন
- বমি বমি ভাব বা ক্লান্তি
- মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা
এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা নিলে কিডনির সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উপসংহার
কিডনিকে সুস্থ রাখতে সঠিক জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি। কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে প্রচুর পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.