ওভারিয়ান সিস্ট হলো ডিম্বাশয়ের (ওভারি) ভেতরে তরলপূর্ণ একটি থলি বা গুটির মতো গঠন, যা নারীদের ডিম্বাশয়ে সাধারণত তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওভারিয়ান সিস্ট ক্ষতিকর নয় এবং এটি সময়ের সঙ্গে নিজে নিজেই দূর হয়ে যায়। তবে কিছু সিস্ট বড় আকার ধারণ করলে বা সমস্যার কারণ হলে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্টের ধরণ
ওভারিয়ান সিস্ট বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। কিছু সাধারণ সিস্টের ধরন নিচে দেওয়া হলো:
- ফলিকুলার সিস্ট: ডিম্বাশয়ে প্রতি মাসে একটি ডিম তৈরি হয়। যখন ডিম নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয় না এবং তরলপূর্ণ ফলিকুলে আটকে যায়, তখন ফলিকুলার সিস্ট তৈরি হয়।
- করপাস লিউটিয়াম সিস্ট: ডিম মুক্ত হওয়ার পর যে থলি তৈরি হয় তা করপাস লিউটিয়াম নামে পরিচিত। কখনো কখনো এই থলিতে রক্ত বা তরল জমে করপাস লিউটিয়াম সিস্ট তৈরি হতে পারে।
- ডারময়েড সিস্ট: এটি ডিম্বাশয়ের ভেতর অস্বাভাবিক কিছু গঠন হিসেবে চুল, দাঁত বা চামড়ার মতো টিস্যু গঠনের কারণে তৈরি হয়। এই সিস্ট সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে বড় হলে তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়।
- এন্ডোমেট্রিওমা সিস্ট: এটি একটি জটিল সিস্ট যা এন্ডোমেট্রিওসিস নামক রোগের কারণে তৈরি হয়। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ওভারি বা ডিম্বাশয়ের বাইরের দিকে বাড়তে শুরু করে, যা সিস্ট তৈরি করে।
ওভারিয়ান সিস্টের লক্ষণ
সব ওভারিয়ান সিস্ট লক্ষণ দেখায় না। অনেক সময় সিস্ট ক্ষুদ্র থাকে এবং নিজে নিজেই দূর হয়ে যায়। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি:
- তলপেটে ব্যথা বা চাপ
- পেট ফুলে ওঠা
- মূত্রত্যাগে সমস্যা
- যৌনমিলনের সময় ব্যথা
- অনিয়মিত মাসিক চক্র
- বমি বা বমি বমি ভাব
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা সিস্টের ধরন, আকার এবং লক্ষণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:
- প্রাকৃতিকভাবে নিরাময়: অনেক ওভারিয়ান সিস্ট ছোট আকারের হয় এবং নিজে নিজেই নিরাময় হয়। এ ধরনের সিস্টের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রায়ই সময় দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। মাসিক চক্রে সিস্ট নিরাময় না হলে পরে অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়।
- ওষুধ: হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সিস্টের গঠন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই ধরনের ওষুধ প্রায়ই দেওয়া হয় যাতে মাসিক চক্র নিয়মিত থাকে এবং নতুন সিস্ট তৈরি না হয়।
- ল্যাপারোস্কোপি: যদি সিস্ট ছোট এবং ধরা পড়া যায়, তবে ল্যাপারোস্কোপি মাধ্যমে ছোট কাট দিয়ে সিস্ট সরিয়ে ফেলা যায়। এই পদ্ধতি কম জটিল এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ল্যাপারোটমি: যদি সিস্ট বড় বা জটিল হয়, তবে ল্যাপারোটমি প্রয়োজন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বড় কাট দিয়ে সিস্ট অপসারণ করা হয়।
- জটিল সিস্টের ক্ষেত্রে চিকিৎসা: যদি সিস্ট ফেটে যায় বা বড় আকার ধারণ করে, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। এটি জীবনশক্তি হ্রাস করতে পারে এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্ট প্রতিরোধের উপায়
ওভারিয়ান সিস্ট সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে এর ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখা
- প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উপসংহার
ওভারিয়ান সিস্ট সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং এটি নিজে নিজেই নিরাময় হতে পারে। তবে যদি বড় সিস্ট হয় বা এর লক্ষণ দেখা যায়, তবে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। ওভারিয়ান সিস্ট সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে বড় জটিলতা এড়ানো যায়।