এজমা কেন হয়: কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়

এজমা বা হাঁপানি হল একটি দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগ যা ফুসফুসে বায়ু চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৬ কোটি মানুষ এজমায় ভুগছে। তবে, সঠিক কারণ জানা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এজমার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই ব্লগে আমরা এজমা কেন হয়, এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এজমা কেন হয়?

এজমার কারণ সম্পূর্ণরূপে জানা না গেলেও, এটি কিছু নির্দিষ্ট কারণ এবং ট্রিগার ফ্যাক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত।

১. বংশগত কারণ

যাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের এজমা বা অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের এজমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

২. পরিবেশগত কারণ
  • ধুলাবালি ও দূষণ।
  • ধোঁয়া এবং রাসায়নিক গ্যাস।
  • ফুলের রেণু বা পোষা প্রাণীর লোম।
৩. অ্যালার্জি

ধুলাবালি, খাবার, বা নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে অ্যালার্জি হলে এজমার উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৪. সংক্রমণ

শিশুদের শৈশবে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এজমার ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. আবহাওয়ার পরিবর্তন

হঠাৎ ঠান্ডা বা আর্দ্র আবহাওয়া এজমার উপসর্গ বাড়াতে পারে।

৬. মানসিক চাপ

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এজমার উপসর্গকে প্রভাবিত করতে পারে।

এজমার লক্ষণ

এজমার প্রধান লক্ষণগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তবে লক্ষণগুলোর তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

১. শ্বাসকষ্ট

শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া এজমার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।

২. কাশি

বিশেষত রাতের দিকে বা ভোরবেলায় শুষ্ক কাশি দেখা দেয়।

৩. বুকে চাপ বা ব্যথা

বুকে চাপ বা ভারী অনুভূতি এজমার অন্যতম উপসর্গ।

raju akon youtube channel subscribtion

৪. হাঁপ ধরা

এজমার সময় শ্বাস নিতে গিয়ে শব্দ হয়, যা হাঁপ ধরা নামে পরিচিত।

৫. ক্লান্তি

বারবার শ্বাসকষ্টের কারণে দেহে অক্সিজেনের অভাব ঘটে, যা ক্লান্তি সৃষ্টি করে।

এজমার প্রতিরোধের উপায়

যদিও এজমা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ
  • ধুলাবালি ও ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন।
  • ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
২. অ্যালার্জি সনাক্ত এবং পরিহার

যেসব খাবার বা উপাদান আপনার এজমার উপসর্গ বাড়ায়, সেগুলো পরিহার করুন।

৩. নিয়মিত ওষুধ সেবন

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করুন।

৪. শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।

৫. মানসিক চাপ কমানো

যোগব্যায়াম বা মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

এজমার চিকিৎসা

এজমার চিকিৎসা মূলত এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো:

  • ইনহেলার: শ্বাসতন্ত্রকে খুলে দিতে সাহায্য করে।
  • স্টেরয়েড ওষুধ: প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যালার্জি শট: অ্যালার্জি প্রতিরোধে কার্যকর।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: এজমার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন।

উপসংহার

এজমা একটি দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হলেও সঠিক পরিচর্যা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজমা প্রতিরোধে পরিবেশগত ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, অ্যালার্জি এড়ানো, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি আপনার বা আপনার পরিবারের কারও এজমার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top