অ্যাংজাইটি (Anxiety) বা উদ্বেগ আমাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক অনুভূতি। এটি তখনই সমস্যাজনক হয়ে ওঠে যখন উদ্বেগ আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে বাধাগ্রস্ত করতে শুরু করে। সাধারণ উদ্বেগের চেয়ে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার অনেক বেশি জটিল এবং স্থায়ী হতে পারে। এর ফলে মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
অ্যাংজাইটির মানসিক লক্ষণসমূহ:
১. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা: প্রায়ই আপনি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন। এটি একটি সাধারণ লক্ষণ যা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২. ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়: ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা নিয়ে অত্যধিক ভয় বা আতঙ্ক অনুভব করা। ৩. অস্থিরতা: সব সময় অস্থির ও অস্বস্তিকর বোধ করা, যেন কিছু ভুল হতে চলেছে। ৪. মনোযোগের অভাব: অ্যাংজাইটি থাকা ব্যক্তিদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। ৫. ঘুমের সমস্যা: অ্যাংজাইটির ফলে অনেকের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। রাতে সহজে ঘুম আসে না এবং ঘুমের মধ্যে অনবরত দুশ্চিন্তা কাজ করে।
অ্যাংজাইটির শারীরিক লক্ষণসমূহ:
১. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া: অ্যাংজাইটির সময় হৃদয়ের গতি বেড়ে যেতে পারে, যেন সব সময় একটি চাপ অনুভব করছেন। ২. শ্বাসকষ্ট: মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা বুক ভারী হয়ে আসে। ৩. ঘাম হওয়া: উদ্বেগের সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া সাধারণ লক্ষণ। ৪. পেশির টান বা ব্যথা: দুশ্চিন্তার কারণে অনেক সময় পেশিতে টান পড়ে বা ব্যথা অনুভূত হয়। ৫. মাথা ঘোরা: উদ্বেগের কারণে মাথা ঘোরা বা হালকা বোধ হতে পারে।
আচরণগত লক্ষণসমূহ:
১. এড়িয়ে চলা: উদ্বেগের কারণে অনেক সময় সামাজিক পরিবেশ বা কাজকর্ম এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা দেয়। ২. খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন: কারো ক্ষেত্রে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত খেতে শুরু করে। ৩. প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে রাখা: অ্যাংজাইটির কারণে দরকারি কাজগুলো ফেলে রাখা বা দেরিতে সম্পন্ন করার প্রবণতা বাড়ে।
অ্যাংজাইটির সাধারণ প্রকারভেদ:
১. জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (GAD): যেখানে প্রতিদিনের ছোটখাটো বিষয় নিয়েও অতিরিক্ত চিন্তায় ডুবে থাকা। ২. প্যানিক ডিসঅর্ডার: যেখানে হঠাৎ করেই আতঙ্কজনক অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং হার্ট বিট বেড়ে যায়। ৩. সোশ্যাল অ্যাংজাইটি: যেখানে সামাজিক পরিস্থিতিতে ভয়, লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করা হয়। ৪. ফোবিয়া: নির্দিষ্ট কোনো বস্তু, প্রাণী বা পরিস্থিতি নিয়ে অস্বাভাবিক ভয় বা আতঙ্ক বোধ।
উপসংহার
অ্যাংজাইটি একটি জটিল মানসিক অবস্থা, যা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা অ্যাংজাইটি কমাতে সহায়ক হতে পারে।